শিক্ষার্থীদের মেসে স্থানীয়দের হা'মলা, মধ্যরাতে উত্তপ্ত ইবি

ইস'লামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকার এক মেসে স্থানীয়দের দ্বারা হা'মলার শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ত্রিবেনী রোডের সাকসেস কোচিং সংলগ্ন রবিউল ইস'লাম মেসে এ ঘটনা ঘটে। আল-কোরআন এন্ড ইস'লামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইস'লামের ম'দদে স্থানীয় ২০-৩০ জন এ হা'মলা করেছেন বলে অ'ভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনার পর আশপাশের অন্যন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা তাদের উপরও চড়াও হয়। এসময় স্থানীয়রা জড়ো হয়ে দেশীয় অ'স্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসে। এমনকি ম'সজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হা'মলা করার প্রস্তুতি নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। মা'রধরের ঘটনার শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের উপর পুনরায় হা'মলার প্রস্তুতি ও স্থানীয়দের সাথে বাকবিতন্ডার ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও প্রক্টরিয়াল বডির কোনো সদস্য সেখানে উপস্থিত হননি বলে অ'ভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে ক্যাম্পাসে আসার পর শৈলকুপা থা'নার পু'লিশ উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেন। পাশাপাশি পু'লিশ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বা'স দেন। আ'হত শিক্ষার্থীদের বিশ্বদ্যিালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আ'হত শিক্ষার্থীরা হলেন, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কামাল উদ্দিন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সুলতান মাহমুদ, ভূগোল বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের জুয়েল রানা, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মাজহারুল ইস'লাম ও দাওয়াহ বিভাগের ২০১৭-১৭ শিক্ষাবর্ষের আব্দুর রহমান।

এ ঘটনার পর ওই মেসসহ আশপাশে থাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগ নেতা ও ত্রিবেণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রেজাউল করিম খান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বা'স দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার সূত্রপাত: প্রত্যক্ষদর্শী ও ভূক্তভোগী সূত্রে, ত্রিবেনী রোডের সাকসেস কোচিং সংলগ্ন রবিউল ইস'লাম মেসে ১২ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। এদের মধ্যে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের কামাল উদ্দীনের মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এজন্য গতকাল সোমবার রাতে তারা মেসে সবাই মিলে ট্যুরের পরিকল্পনা করছিলেন। মেসের পাশেই বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-কোরআন এন্ড ইস'লামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইস'লামের। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাহিদ তাদের মেসে আসেন এবং কামালকে ডাকেন। এরপর শিক্ষার্থীদের চিল্লাচিল্লির কারণে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় বলে জানান। এর আগেও শিক্ষার্থীরা মেসে চিল্লাচিল্লি করেন বলে অ'ভিযোগ করেন তিনি।

পরে মেসে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে জাহিদ চটে যান এবং শিক্ষার্থীদের শাসাতে থাকেন। একপর্যায়ে জাহিদ শিক্ষার্থীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর জাহিদ শিক্ষার্থীদের দেখে নেওয়া এবং হাড়গোড় ভেঙে দেয়ার হু'মকি দিয়ে চলে যান। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে জাহিদ অন্তত ২০ থেকে ৩০ জনকে নিয়ে মেসে ঢুকেন। এসময় মেসের সাটার বন্ধ করে এলোপাতাড়ি পে'টাতে থাকেন। হা'মলাকারীদের হাতে লা'ঠি, বাঁশ, কাঠ, রড লাইট ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে একজন গুরুতরসহ অন্তত পাঁচ জন শিক্ষার্থী আ'হত হয়েছেন।

এসময় হা'মলাকারীরা মেসের সাটার নামিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরূদ্ধ করে রাখেন। অব'রুদ্ধ থাকাবস্থায় মেসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ফোনে বিষয়টি জানান। এসময় প্রক্টর পু'লিশ পাঠাবেন বলে তাদের আশ্বা'স দেন বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। পরে তারা আশপাশের শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানালে সাটার খুলে সেখান থেকে তাদের উ'দ্ধার করেন। একজন শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরআগে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখে স্থানীয়রাও আস্তে আস্তে জড়ো থাকে। এসময় পর্যন্তও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি কিংবা পু'লিশ প্রশাসন কেউ উপস্থিত হননি।

শিক্ষার্থীরা কর্মক'র্তা জাহিদের খোঁজ করতে চাইলে স্থানীয়রা তদের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। আনন্দনগর জামে ম'সজিদ এলাকাসহ তিন দিক থেকে থেকে প্রায় দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন দা, রড, শাবলসহ দেশীয় অ'স্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হা'মলার জন্য এগোতে থাকে। শিক্ষার্থীরা অবস্থা বেগতিক দেখে আবারো প্রক্টরিয়াল বডির কাছে ফোন দিয়ে সাহায্যে চান। এসময়ও প্রক্টরিয়াল বডি কিংবা পু'লিশ কেউই ঘটনাস্থলে যাননি। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়েন। তবে কয়েকজন ঘটনাস্থলে থেকে যায়। পরে ত্রিবেণী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিম খানসহ এলাকায় কয়েকজন প্রতিনিধি স্থানীয়দের আ'ট'কান।

পরে রাত সাড়ে দশটার দিকে পু'লিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দেরকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে বসেন এবং বিষয়টি সুরাহা করার আশ্বা'স দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মেসে অবস্থানের বিষয়ে নিরাপত্তার আশ্বা'স দেন। তবে এরমধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কেউই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী অ'ভিযোগ করে বলেন, আমাদের ভাইয়েরা মা'র খেয়েছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে স্থানীয়রা আমাদের উপর চড়াও হয়। তিনদিক থেকে দেশীয় অ'স্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হা'মলার জন্য এগিয়ে আসে। অনেকবার আম'রা প্রক্টরিয়াল বডিকে জানিয়েছি কিন্তু একটি বারের জন্য কেউই আমাদের রক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে আসলেন না।

ভূক্তভোগী কামাল উদ্দীন বলেন, জাহিদ ভাই আমাদের পাশের মেসে থাকেন। মঙ্গলবার রাতে আমাদের মেসে আসেন এবং আম'রা প্রতিনিয়ত চিল্লাচিল্লি করি বলে অ'ভিযোগ করেন। একইসাথে তিনি রাগারাগি করেন এবং আমাদের হু'মকি ধামকি মেস থেকে চলে যান। পরে তিনি ৩০/৪০ জনকে নিয়ে আমাদেও উপর অ'তর্কিত হা'মলা করেন। তিনি (জাহিদ) নিজেও আমাকে মে'রেছে।

এ বিষয়ে অ'ভিযু'ক্ত কর্মক'র্তা জাহিদ হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। মা'রামা'রির ঘটনার সাথে আমা'র সংশিষ্টতা নেই। উল্টো শিক্ষার্থরা আমাকে বিনা কারণে অ'ভিযু'ক্ত করে আমা'র বাড়ির গেটে ইট পাট'কেল মে'রেছে। আমি বিষয়টি প্রক্টরকে জানিয়েছি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেস মালিক রবিউল ইস'লাম বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমি বিচার চাইবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনা শুনার পরই আমি পু'লিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলি এবং তাদেরকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। পাশাপাশি সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইস'লামকে ঘটনাস্থলে যেতে বলি। তবে এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইস'লামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশনা পাননি বলেন জানান। তিনি বলেন, ঘটনা শোনার পর নির্দেশনার অ'পেক্ষায় ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে যেতে দেরি হয়েছিল।

মধ্যরাতে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস: এদিকে স্থানীয়দের দ্বারা মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর হা'মলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে ছাত্র আ'ন্দোলনের উ'ত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ক্যাম্পাসে। হা'মলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা হা'মলার নেতৃত্বদানকারী আল-কোরআন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাহিদুল ইস'লামের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি, হা'মলার সাথে জ'ড়িতদের বিরূদ্ধে যথাযথ ব্যববস্থা গ্রহণ, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও প্রক্টোরিয়াল বডির ভূমিকা নিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা।

এসময় এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন বক্তব্য দেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের বন্দী করে হা'মলা অ'ত্যন্ত অমানবিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। আম'রা ঘৃনাভরে এর প্রতিবাদ জানাই। মা'রধরের পর মেসে অব'রুদ্ধ শিক্ষার্থীরা সাহায্য চেয়ে প্রক্টরিয়াল বডির কাছে ফোন দেওয়ার পরও সেখানে প্রশাসনের কোনো ভূমিকাই ছিলোনা।

বরং অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের উ'দ্ধার ও প্রতিবাদ করতে গেলে তারাও হা'মলার মুখে পড়ে জীবন নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এসব ঘটনার দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক'র্তাব্যক্তি শিক্ষার্থীদের সাহায্যর্থে এগিয়ে জাননি, যা আমাদের জন্য অ'ত্যন্ত বেদনাদায়ক। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এ ঘটনার মুলহোতা কর্মক'র্তা জাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি মা'রধরের সাথে জ'ড়িত স্থানীয়দের শনাক্ত করে শা'স্তির আওতায় আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

পরে রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন ও সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইস'লাম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে যান এবং আ'ন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় তারা বুধবার ১১টায় শিক্ষার্থীদের এসব দাবি নিয়ে উপাচার্যের সাথে বসার আশ্বা'স দেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

Back to top button