চি'ৎকার যেন কেউ শুনতে না পারে, সেজন্য কেবিন ভাড়া করে মাসুদ
লঞ্চের কেবিন থেকে শারমিন আক্তার নামের এক মহিলার ম'রদেহ উ'দ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় স্বামী মো. মাসুকে গ্রে'ফতার করেছে র্যা'ব। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) কক্সবাজার থেকে থেকে র্যা'ব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যা'ব-১৫ এর অ'ভিযানে মাসুদ হাওলাদারকে গ্রে'ফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রে'ফতার মাসুদ লঞ্চে হ'ত্যাকা'ণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে র্যা'বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে এ হ'ত্যা মা'মলার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন মাসুদ। মাসুদ জানায় শারমিনকে বিয়ে করলেও তার সাথে সংসার করতে আগ্রহী ছিলো না। কিন্তু শারমিনকে ডিভোর্স দিতে চাইলেও দেনমোহর বাবদ পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করার ক্ষমতাও ছিল না তার। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। হ'ত্যাকা'ণ্ডের ১৫-২০ দিন আগে শারমিনকে হ'ত্যার পরিকল্পনা করেন মাসুদ। এই ঘটনার ৫ দিন আগে শারমিনের সর্দি ও কাশি হয়। পরে স্বামী মাসুদ কাশির সিরাপের সাথে বিষপান করান।
গত ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমডি কুয়াকা'টা-২ নামে লঞ্চটি বরিশাল পৌঁছালে শারমিন আক্তার নামে ওই নারীর ম'রদেহ উ'দ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন নি'হতের বাবা বাদী হয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থা'নায় একটি হ'ত্যা মা'মলা করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ আরও জানান, হ'ত্যার সময় যাতে শারমিনের চি'ৎকারে আশপাশের কেউ কিছু শুনতে না পারে এজন্য তিনি পরিক'ল্পিতভাবেই বরিশালগামী এমভি কুয়াকা'টা-২ লঞ্চের কেবিন ভাড়া নেন। ৯ ডিসেম্বর রাত ৯টায় লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। লঞ্চ যাত্রা শুরু করার পর মাসুদ সঙ্গে থাকা বিষযু'ক্ত কাশির সিরাপ শারমিনকে খাওয়ান। বিষ খাওয়ার পর শারমিন ৩-৪ বার বমি করে অ'সুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বাইরে থেকে কেবিন তালাবদ্ধ করে লঞ্চের রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যান মাসুদ।
রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে মাসুদ কেবিনের সামনে এসে দেখতে পান, শারমিন কেবিনের দরজার ফাঁক দিয়ে বিষের বোতলটি মেঝেতে ফেলে দিয়েছেন। মাসুদ তখন পানি দিয়ে কেবিনের দরজার সামনে পড়ে থাকা বিষ পরিষ্কার করে আবার কেবিনে প্রবেশ করেন। তখনো শারমিনের শ্বা'স-প্রশ্বা'স চলছিল। এরপর মৃ'ত্যু নিশ্চিত করতে শ্বা'সরোধ করে হ'ত্যা করেন।
লঞ্চ যখন চরমোনাই ঘাটে এসে পৌঁছায়, তখন মাসুদ কেবিন থেকে বের হয়ে লঞ্চের দরজায় অবস্থান নেন। লঞ্চ বরিশাল শহরের ঘাটে এসে পৌঁছালে মাসুদ স্বাভাবিকভাবে লঞ্চ থেকে বের হয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান।
র্যা'বের মুখপাত্র আরও বলেন, ১০ ডিসেম্বর দুপুরের পর দেশের সব ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হ'ত্যাকা'ণ্ডের ঘটনাটি প্রচার হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। র্যা'ব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা দল ও র্যা'ব-৮ এ ঘটনার ছায়া ত'দন্ত শুরু করে। অন্যদিকে মাসুদের এলাকায় ঘটনাটির ব্যাপারে জানাজানি হলে তিনি আত্মগো'পনের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতটি জে'লার (বরিশাল, মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) বিভিন্ন জায়গায় আত্মগো'পন করে।
জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে আশুলিয়ার একটি কোম্পানিতে পিকআপের হেলপার হিসেবে কর্ম'রত ছিল মাসুদ। ভিকটিম শারমিন ১২ বছর ধরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায় তার চাচার বাসায় থেকে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ২০১৯ সালের শুরুতে তাদের পরিচয় হয় ও বিয়ের আগে শারমিন বিমানবন্দর থা'নায় মাসুদের নামে একটি ধ'র্ষণ মা'মলা করেন। পরে ওই মা'মলার নিষ্পত্তির জন্য উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর শারমিনের চাচার বাসায় তাদের বিয়ে হয়।