অন্ধ হাফেজ মাহমুদুর রহমানের বেঁচে ফেরার গল্প
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অ'ভিযান-১০ লঞ্চে অ'গ্নিকা'ণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃ'ত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতা'লে ৬৭ জন অ'গ্নিদ'গ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে এসে রাত ৩টার দিকে ঝািলকাঠি জে'লার নলছিটি উপজে'লার সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দে অ'গ্নিকা'ণ্ডের সূত্রপাত হয়।
অ'গ্নিকা'ণ্ডের ঘটনায় প্রা'ণে বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে রয়েছে এক দৃষ্টিপ্রতিব'ন্ধী হাফেজ মাহমুদুর রহমান মিরাজ। তার বাড়ি বরগুনা সদর উপজে'লার ৯ নং বালিয়াতলী ইউনিয়নে। পাঁচজনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মা, সন্তান, স্ত্রী' আর নিজে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। ফেরেননি বাবা ৫১ বছর বয়সী ইদ্রিস খান। প্রা'ণে বেঁচে ফেরার পর তিনি বলছিলেন কিভাবে অ'গ্নিকা'ণ্ডের হাত থেকে রক্ষা পেলেন তিনি সহ তার পরিবারের চার জন। মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি তো অন্ধ, চোখে দেখি না। সেই রাতে যদি আমা'র স্ত্রী' আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে না ফেলে দিত তাহলে আর বেঁচে ফেরা হতো না।
তিনি বলেন, আব্বা অ'সুস্থ ছিলেন। তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়েছিলাম ঢাকাতে। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার সদরঘাট থেকে অ'ভিযান-১০ লঞ্চে উঠে নিচতলার ডেকে আম'রা পাঁচজনে বিছানা বিছাই। লঞ্চ ছাড়ার পর আমাদের গ্রামেরই আরেক পরিচিত এসে আব্বাকে দোতলায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, আমি তো একা, আসেন খোশগল্প করতে করতে রাত পার করে দেই।
মাঝরাতে হঠাৎ চারদিকে আ'গুন আ'গুন বলে চি'ৎকার শুরু হয়। তখন আমি, মা, আমা'র স্ত্রী' ও কন্যা নিয়ে লঞ্চের সামনে চলে আসি। এই সময়ে আমা'র হাত ফসকে স্ত্রী' ও কন্যা একবার হারিয়ে গিয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা আমাকে খুঁজে পায়।
এই দৃষ্টিপ্রতিব'ন্ধী যুবক বলেন, আমি বারবার স্ত্রী' ও মাকে বলছিলাম আব্বার সন্ধান নিতে। লোকজনের মধ্যে চি'ৎকার করে ডেকেছিও। কিন্তু আ'গুনে হয়তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, নয়তো ভিড় ঠেলে আসতে পারেনি। এখন এসেছি তাকে খুঁজতে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, সবাই তখন চি'ৎকার আর কা'ন্নাকাটি করছিল। আম'রা চারজন লঞ্চের সামনে এক কিনারে ছিলাম। কী' করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমা'র স্ত্রী' আমা'র মাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন। মা নদীতে পড়ে পায়ে মাটি পান। তিনি চি'ৎকার করে আমাদেরও ঝাপ দিতে বলেন। মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আমিও ঝাপ দিতে চাইছিলাম। কিন্তু ঝাপ দিয়ে লঞ্চের মধ্যে মানুষের গায়ে পড়ছিলাম। তখন আমা'র স্ত্রী' আমাকেও লঞ্চের কিনারে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং মে'য়েকে নিয়ে নিজেও ঝাপ দেন। এরপর আম'রা চারজনে সাঁতরে নদীর কিনারে উঠি। তিনি বলেন, এখন আসছি আব্বার লা'শটা অন্তত নিয়ে যেতে।