লিবিয়া গিয়ে ব'ন্দি ছে'লেকে উ'দ্ধার করে আনলেন মা
পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে গিয়ে অনেক ক'ষ্ট করতে হয়েছে ইয়াকুবকে। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির একটি দ্বীপে মাফিয়া চক্রের ব'ন্দিদশা থেকে অ'পহৃত সন্তানকে মুক্ত করে আনলেন বাংলাদেশি মা! যে মা বাসে চড়ে কখনো ঢাকায় যাননি, সেই মা উড়োজাহাজে চড়ে সোয়া সাত হাজার কিলোমিটার দূরে অ'পহ'রণকারীদের ব'ন্দিশি'বির থেকে উ'দ্ধার করে আনলেন একমাত্র ছে'লেকে।
কুমিল্লা জে'লার দেবীদ্বার উপজে'লার কালিকাপুর গ্রামের লিবিয়াপ্রবাসী আবুল খায়েরের স্ত্রী' শাহীনুর বেগম (৪৫) লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে মাফিয়া চক্রের হাতে ছয় মাস ধরে ব'ন্দি থাকা ছে'লেকে উ'দ্ধার করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন।
সোমবার সরেজমিনে উপজে'লার কালিকাপুর শাহিনুরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক ভিড়। সবাই মা-ছে'লেকে দেখতে ভিড় জমিয়েছে।
শাহিনুর বেগম ও তার পুত্র ইয়াকুব হোসাইনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের দুঃসাহসী অ'ভিযানের কাহিনি।
শাহিনুর বেগম বলেন, ‘সবাই বলছিল আমা'র ছে'লে মা'রা গেছে, তাকে মে'রে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমা'র বিশ্বা'স হচ্ছিল না। চার দফায় ছে'লেকে উ'দ্ধারের জন্য আমি ও আমা'র লিবিয়াপ্রবাসী স্বামী দালালকে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। ছয় মাসেও ছে'লের কোনো খোঁজ না পেয়ে লিবিয়াপ্রবাসী স্বামীর সহযোগিতায় পাসপোর্ট ও ভিসা নিশ্চিতকরে নিজেই লিবিয়ায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ‘
পরিবারের দৈন্য ঘোচাতে প্রায় ১১ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১১ সালে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান আবুল খায়ের। এর মধ্যে দুই কন্যার বিয়ে হয়ে যায়। অভাবের সংসারে আরো একটু সচ্ছলতা আনতে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৯ সালের মে মাসে একমাত্র ছে'লে ইয়াকুব হাসানকেও পাঠানো হয় লিবিয়ায়।
ইয়াকুব হাসান লিবিয়ায় বেনগাজি শহরের কনস্ট্রাকশন ফার্মে কর্ম'রত তার বাবার কাছে থাকতেন। প্রথম দুই বছর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। ইয়াকুব প্রথম এক বছর ‘আল হারুজ’ তেলের পাম্পে ৩৫ হাজার টাকায় এবং পরের এক বছর হাকজিলতন তেলের পাম্পে ৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন।
পরে সিলেটের হবিগঞ্জের দালাল জাহাঙ্গীরের খপ্পরে পড়ে অ'বৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলি থেকে বোটে করে ১৫০ জন ইতালি যাওয়ার পথে লাম্পেদুসা দ্বীপে ‘মাফিয়াদের’ হাতে ধ'রা পড়েন ইয়াকুব। ওখান থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এক বাঙালি দালাল ধরে বাবার সহযোগিতায় চার লাখ টাকায় মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। দ্বিতীয় দফায় মাফিয়া চক্র লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের নিকট তাদের বিক্রি করে দেয়।
কোস্ট গার্ড ওখান থেকে তাদের অন্য একটি দ্বীপে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে চলে অমানবিক জীবন। একেটি কক্ষে প্রায় ৬০-৭০ জনের অবস্থান। খাদ্যসংকট, শারীরিক নি'র্যাতনসহ নানা কারণে প্রতিদিনই ম'রছে সাথিরা। লা'শের পচা গন্ধ, পেটের ক্ষুধা, পানিসংকট আর টাকার জন্য চলে ব'ন্দুকের বাঁটের আ'ঘাত ও পানির পাইপের পে'টানি। শরীরের ক্ষতচিহ্নে পচন ধরেছে ইয়াকুবসহ অন্যদের। প্রতিদিন একটি রুটি, কোনো দিন আধা রুটি খেয়ে শরীরের যন্ত্র'ণায় জীবন অ'তিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ সংবাদে তার বাবা আবুল খায়ের হার্ট অ্যাটাক করে অ'সুস্থ হয়ে পড়েন।
শাহিনুর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশে পাড়ি দেন। স্বামীর সাথে লিবিয়ায় বেনগাজিতে অবস্থান করে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ এবং সে'নাবাহিনী ও আইওএমের কর্মক'র্তা এবং সে'না সদস্যদের সহযোগিতায় ওখান থেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন।