সব ইস'লামী দলগুলো এক ছাতার নিচে: নেপথ্যে জামায়াত
সবগুলো ইস'লামী দলকে এক ছাতার নিচে আনার প্রক্রিয়া চলছে। পবিত্র রমজান মাসে এই কাজের অনেকদূর অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী ইস'লামপছন দলগুলো নানা ভাগে বিভক্ত। নানা রকম চিন্তা চেতনার দিক থেকে এদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন হেফাজতে ইস'লামের সঙ্গে জামায়াতের আদর্শ মিল নেই, আবার খেলাফত মজলিসের সাথে জামায়াতের মতপার্থক্য রয়েছে। এরকম সবগুলো ইস'লামিক দলের চিন্তা-চেতনায় কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে কিন্তু এবার সবগুলো ইস'লামী দলকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার এক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে ইস'লামী দলগুলো তাদের মতপার্থক্য কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি ‘মজলিস’ করেছে বলে জানা গেছে এবং তারা আশা করছে যে তাদের যে ছোট ছোট বিভক্তি গুলো, তা কে'টে যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সবগুলো ইস'লামী দলের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মের মূল লক্ষ্য হবে সরকার পতনের আ'ন্দোলন এবং বাংলাদেশকে একটি ইস'লামী প্রজাতন্ত্র বানানো। আর এই লক্ষ্যে তারা শীঘ্রই কাজ করবে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
গত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপি’র বিপর্যয়ের মধ্যে খেলাফত মজলিসের এবং ইস'লামী শাসনতন্ত্র আ'ন্দোলনের উত্থান লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন নির্বাচনে তারা ভালো ভোট পাচ্ছিল। বিক্ষিপ্তভাবে দেখলে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে সক্রিয় কমবেশি ১৫ টি ইস'লামী সংগঠন রয়েছে যে সংগঠনগুলোর জনসম'র্থন রয়েছে, সাংগঠনিক ভিত্তি রয়েছে। এর বাইরে হেফাজত ইস'লাম দক্ষিণপন্থীদের একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। যদিও হেফাজত ইস'লামকে কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে বলতে রাজি নন হেফাজতের বর্তমান নেতারা। কিন্তু প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হকরা যখন হেফাজতের দায়িত্ব ছিলেন তখন হেফাজতের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ্য হয়ে উঠেছিল। এখন হেফাজত একটু নিষ্ক্রিয় থাকলেও তাদের একটা বড় কর্মীবাহিনী রয়েছে, মাদ্রাসাভিত্তিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। জামায়াত এই নেটওয়ার্কটাকেও কাজে লাগাতে চায়। খেলাফতে মজলিস, ইস'লামী শাসনতন্ত্র আ'ন্দোলনসহ অন্যান্য ইস'লামী দলগুলো দলগুলো বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় সংঘটিত। কোনটির হয়তো বগুড়ায় খুব ভালো সংগঠন রয়েছে, অন্যটির সিলেটে। এই লক্ষ্যে সারাদেশ ইস'লামী রাজনৈতিক দলগুলোকে একী'ভূত করা হচ্ছে।
তবে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে, এই ঐক্যবদ্ধ করার পিছনে জামায়াতের ভূমিকাই রয়েছে সবচেয়ে বেশি। জামায়াত যু'দ্ধাপরাধের বিচারের প্রেক্ষিতে কোণঠাসা অবস্থায়, তারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারছে না, তাদের শীর্ষ প্রায় সব নেতাকে হয় দ'ণ্ডিত হতে হয়েছে যু'দ্ধাপরাধের দায়ে অথবা তারা বিভিন্ন মা'মলায় এখন পলাতক অথবা দ'ণ্ডিত। এরকম পরিস্থিতিতে জামায়াত তার কর্মকা'ণ্ডকে অব্যাহত রেখেছে। আর এই কর্মকা'ণ্ডের একটি অংশ হলো যে, জামায়াতের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ইস'লামী সংগঠনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং এই সমস্ত সংগঠনগুলোতে তারা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে আসেন, সেই সময় হেফাজত সারাদেশের তা'ণ্ডব করে। এর নেপথ্যে জামায়াত ছিলো। হেফাজতে এখন জামায়াতের এটা বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। অন্যান্য ইস'লামী সংগঠনগুলোতেও জামায়াতের নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জামায়াত একটি ইস'লামী ঐক্য তৈরি করতে চাচ্ছে এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বাইরে ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশে একটি ইস'লামিক রাজনৈতিক শক্তি দাঁড়াবে, যে শক্তির নেপথ্যে থাকবে জামায়াত। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ইস'লামপছন দলগুলোর মতপার্থক্য প্রবল। তাদের মৌলিক চিন্তা ভাবনার যোজন দূরত্ব রয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে সবগুলো ইস'লামী দলকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রায় অবাস্তব এবং অসম্ভব একটি ব্যাপার।