‘সন্তানদের খুশিই এখন আমাদের ঈদ’

এখন তো ঈদ ছে'লে-মে'য়েদের। নতুন জামা তো তারা পরবে। একসময় আম'রা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের নতুন জামা'র ইচ্ছেপূরণ করেছেন বাবা। এখন আম'রা বাবা হয়ে গেছি। আমাদের আর ঈদ নেই। সন্তানদের খুশিই এখন আমাদের ঈদ।’

কথাগুলো বলছিলেন পুরান ঢাকার রাজধানী মা'র্কে'টের সামনের ডিম বিক্রেতা মো. মামুন খান।

মামুন খানের বাড়ি ঝালকাঠি জে'লায়। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় মামুন খান। এক মে'য়ে ও এক ছে'লে সন্তানের জনক। মে'য়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে, ছে'লে পড়ে হাফেজি। স্ত্রী', ছে'লে-মে'য়েদের নিয়ে থাকেন পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায়। দিনে বেকারিতে কাজ করেন, রাতে বেকারির সামনেই বিক্রি করেন ডিম। দিনরাত কাজ করেও আয় ও ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারেন না মামুন। সংসার চালানো কঠিন হয়ে যায়।

তিনি বলেন, বেকারিতে কাজ করে পাই মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা। গরম ও রোজার কারণে ডিম বিক্রি কম। প্রতিদিন ৫০-৬০টি বিক্রি হয়। দিনে ২শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা আয়, মাসে ৯-১০ হাজার টাকা হয়। বাসা ভাড়া ৯ হাজার, ছে'লে-মে'য়ের পড়ার খরচ, সংসারের অন্যান্য খরচ মেলাতে হিমশিম খাই। তারপরও ঈদে সন্তানদের জন্য ঈদের নতুন জামা কিনে দিয়েছি। কারণ ঈদ সন্তানদের জন্যই।

বাবা না থাকলেও মা আছে মামুন খানের। তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মায়ের জন্যও ঈদের কাপড় কিনে পাঠিয়েছেন। তবে নিজের জন্য এখনো কিছু কেনেননি তিনি। জানতে চাইলে বলেন, কিনবো কিছু একটা।

তবে কথার ভাবে মনে হলো এটা গৌণ ব্যাপার। তার কাছে ঈদ মানে নিজের নতুন জমা নয়, পরিবারের সবার জন্য কাপড় কিনতে পেরেছেন, এতেই সন্তুষ্ট। নিজের জন্য সুবিধামতো একটা কিছু নেবেন, তার অর্থ হলো- ঈদ বা আনন্দের জন্য নয়। প্রয়োজন ও সাধ্যের মিল করে যা হয়, তাই নেবেন।

শীতে মামুন খানের আয় ভালো হয়। সেসময় ২-৩শ ডিম বিক্রি হয়। কামাই ভালো থাকে। সেটিও অ'তো বেশি আয় নয়। ২০ বছর যাবত এভাবেই ঢাকার ফুটপাতে ডিম বিক্রি করে জীবন কাটিয়ে দিলেন মামুন খান।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, ভবিষ্যৎ তো সন্তানদের। ওদের মানুষ করতে পারলেই হলো। আম'রা আর কয়দিন বাঁচবো? তবে সংগ্রামী এই জীবনে হতাশা নেই মামুন খানের। চলে যাচ্ছে দিব্যি ভালোই।

Back to top button