ঈদের ছুটিতে খালি নেই ঢাকায় কুকুর-বিড়ালের পাঁচ তারকা‘হোটেল’
কুকুর, বিড়াল বা পোষা প্রা’ণীর জন্য পাঁচ তারকা হোটেলের মতো বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডে বিড়াল ও কুকুরের জন্য চালু হয়েছে আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’। ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে যারা গ্রামে গেছেন কিংবা দেশের বাইরে গেছেন, তাদের সম্পূর্ণ চাপটি পড়েছে এখানে। অনেকেই নিজের প্রিয় পোষা প্রা’ণীটিকে ঝাক্কি ঝামেলা মুক্ত রাখতে ‘ফারিঘর’ রেখে গেছেন। তবে তারা তাদের প্রিয় প্রা’ণীটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন। এমনকি ভিডিও কলেও কথা বলেছেন।
হোটেলের তিন উদ্যোক্তা হলেন প ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থপতি রাকিবুল হক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুজহাত নাবিলা এবং ডিজিটাল মা’র্কেটিং খাতে কর্ম’রত খালিদ ফারহান। উদ্যোক্তারা জানান, হোটেলটিতে বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ভাড়া ৫০০ টাকা। আর কুকুরের ক্ষেত্রে দেড় হাজার। কুকুর–বিড়ালের মালিক খাবার সঙ্গে করে দিয়ে দেবেন।
উদ্যোক্তাদের একজন নুজহাত নাবিলা বলেন, তাঁর নিজেরও পোষা বিড়াল আছে। পরিবারের সবাই কোথাও বেড়াতে গেলে কাউকে না কাউকে বাসায় থাকতে হয় শুধু এগুলোকে দেখার জন্য। তাই তিনি নিজেও অনেক দিন থেকে এ ধরনের একটি হোটেলের অভাববোধ করছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি পোষা প্রা’ণীর জন্য এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যু’ক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন।
এই রোজার ঈদে ‘অ’তিথি’ কেমন এসেছে, জানতে চাইলে হোটেলের ম্যানেজার তারিন নাজ নীরার বলেন, ‘ঈদের আগেও ভালো আসত। ২৬ মা’র্চের আগে-পরে একটা লম্বা ছুটি পড়েছিল। তখনও আমাদের হাউস ফুল। ঈদে শুধু হাউস ফুল না, এক্সট্রা রুমেরও ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এখনও অনেকে ফোন দিচ্ছেন, কিন্তু জায়গার অভাবে রাখতে পারছি না।’
ধারণাক্ষমতা স’ম্প’র্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিড়ালের জন্য পার্মানেন্ট ১৪টা কেবিন আছে। কুকুরের জন্য তিনটা রুম আছে। কুকুরের রুমগুলো একটু বড়। একটা কেবিনে একটা পরিবারের সর্বোচ্চ তিনটা বিড়াল রাখা হয়। বিড়ালের যেন কোনো সমস্যা না হয়, এ কারণে আলাদা পরিবারের জন্য আলাদা কেবিন। বিড়ালদের এক-একটা কেবিন পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট।’
তারিন জানান, ফারিঘরে ঈদের চাপ শুরু হয়েছে রোজার শুরু থেকেই। চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সব কক্ষ বুক করা আছে। এই সময়ের মধ্যে নতুন করে কোনো বিড়াল বা কুকুর হোটেলে জায়গা দিতে পারবেন না তারা।
তারিন বলেন, ‘১৫ রোজার পর থেকে যত ফোন আসছে, সবাইকে স্যরি বলতে হচ্ছে জায়গা না থাকার কারণে। আম’রা তো মাত্র শুরু করলাম। আরও জায়গা বাড়ানোর চিন্তা আছে আমাদের। আম’রা আগে বুকিং নিই এবং অগ্রিম টাকা নিয়ে থাকি। যার প্রা’ণী তাকেই আম’রা খাবারটা দিতে বলি। আম’রা শুধু প্রক্রিয়া করে খাওয়াই। আম’রা খাওয়ালে তার জন্য আলাদা টাকা দিতে হবে।’
বিড়ালের জন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং কুকুরের জন্য ১৫০০ টাকা দিতে হয় ফারিঘর হোটেলে। প্যাকেজ আছে পাঁচ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন, ২০ দিন ও ৩০ দিনের। প্যাকেজ নিলে ভাড়া কিছুটা কমে আসে। আবার এক পরিবারের দুই-তিনটি বিড়াল কেবিন শেয়ার করলে সে ক্ষেত্রে ভাড়া কমে আসে।
ম্যানেজার তারিন বলেন, ‘ঈদে ২৬টা বিড়াল রেখেছি আম’রা। কুকুর আছে দুইটা। আরও দুইটা কুকুর আজকে চলে আসবে।
‘চলতি মাসে আম’রা চালু করছি পেট ক্যাফে। পেট ফ্রেন্ডলি মানুষ এই ক্যাফেতে আসতে পারবেন। ক্যাফে চালু হলে যাদের বিড়াল আছে তারা তাদের বিড়াল নিয়ে এখানে আসতে পারবেন বা এখানের বিড়ালের সঙ্গে সময় কা’টাতে পারবেন।’
হোটেলে রাখার বিভিন্ন শর্তের মধ্যে একটি শর্ত হচ্ছে কুকুর, বিড়ালের টিকা দেওয়া থাকতে হবে। এ শর্ত মানুষকে টিকার বিষয়টিতেও সচেতন করছে। মালিকের ভোটার পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখা, জরুরি যোগাযোগের নম্বর রাখাসহ বিভিন্ন সতর্কতা মানা হচ্ছে।