সাহায্যের কথা বলে নাহিদের স্ত্রী'কে বিয়ের প্রস্তাব
রাজধানীর নিউমা'র্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সং'ঘর্ষে নি'হত ডেলিভা'রিম্যান নাহিদ মাত্র ৬ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। স্বামীকে হারিয়ে তার স্ত্রী' যখন শোকে বিহ্বল তখনই তাকে ল'ড়াই করতে হচ্ছে আরও এক অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সঙ্গে। নাহিদের মৃ'ত্যুর পর লোকজন সাহায্য-সহযোগিতা করার নামে ফোনে ডালিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে বেশিরভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফোন। সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলে মোবাইল নম্বর নেওয়া লোকজন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে নম্বরটি ছড়িয়ে পড়ার কারণেই মূলত এ ঘটনা ঘটছে বলে তাদের ধারণা।
ভালোবাসার মানুষ নাহিদের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে বিয়ে হয় ডালিয়া আক্তারের। সদ্যবিধবা এই নারীর পাশে বিত্তবানরা দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় যু'ক্ত করা হয়েছে ডালিয়ার মোবাইল নম্বর (বিকাশ)। সেই নম্বরেই ফোন করে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে অ'পরিচিতরা। এমনকি ইমো নম্বরে ভিডিও কল দিয়েও সহযোগিতার নামে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে চাইছে। স্বামী হা'রানোর শোকের মধ্যে তাকে ল'ড়াই করতে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিব্রতকর এই পরিস্থিতির সঙ্গে।
নাহিদের মা নার্গিস বেগম বলেন, ‘নাহিদের বউকে ফোন দিয়ে বিভিন্নজন আজেবাজে কথা বলে। সময়ে-অসময়ে ফোন দেয়।’ ফোন দিয়ে আসলে কী' বলে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাহিদের বউ ডালিয়া আছে কিনা জানতে চায়। ডালিয়াকে কী' দরকার জানতে চাইলে বলে, তার জন্য ভালো পাত্র আছে। ওকে কি বিয়ে দেবেন?’ শোকাহত এই মা বলেন, ‘ছে'লেকে হারিয়েছি। এখন মানুষ এসব কথা বলে। শুনতে ক'ষ্ট লাগে। সহ্য করি। কা'ন্না আসে। কথা বের হয় না। অ'পর পাশ থেকে সাড়া না পেয়ে ফোন কে'টে দেয়।’
ডালিয়া আক্তার বলেন, ‘ফোন দিয়ে বিয়ের কথা বলে। বিয়ে করব কিনা জানতে চায়। তাদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। তারপরও কেউ কেউ বারবার বির'ক্ত করে। তখন বলি- আপনার কি ঘরে মা-বোন নেই? আজকে যদি আপনার বোনের স্বামী মা'রা যেত, তাহলে আপনি এই কথা বলতে পারতেন? পরে ফোন কে'টে দেয়। এভাবে প্রতিদিনই একাধিক কল আসে। বাধ্য হয়ে মাঝেমধ্যে ফোন বন্ধ রাখি। কিছু সময় খোলা রাখলেও অ'পরিচিতি নম্বরের ফোন রিসিভ করি না আর।’ ডালিয়া জানান, মাত্র দেড় বছর বয়স থেকে নানির কাছে বড় হয়েছেন। মা-বাবার আদর-স্নেহ পাননি। স্বামীর সঙ্গে একটি পরিবার পেয়েছিলেন। এখন তো সব শেষ। তবে নাহিদের স্মৃ'তি আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চান। এর জন্য তার একটা সরকারি চাকরি দরকার। পড়ালেখার যোগ্যতা অনুযায়ী যেন তাকে একটি চাকরি দেওয়া হয়।
বিয়ের পরের প্রথম ঈদটি তার জীবনের সবচেয়ে ক'ষ্টের উৎসব উল্লেখ করে ডালিয়া বলেন, ‘ঘটনার দিন বাসায় ফিরে আমাকে নিয়ে কাম'রাঙ্গীরচর রনি মা'র্কে'টে ঈদের কেনাকা'টা করবে বলেছিল নাহিদ। আর ঈদের পরের দিন একসঙ্গে আমা'র বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আর ফেরা হলো না।’ তিনি বলেন, ‘ঈদে ঢাকাতেই শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছিলাম। ঈদের আগে বাবা এসে দেখে গেছেন। এই ঈদ যেন আমা'র জীবনে আরও ক'ষ্ট নিয়ে এসেছে।’
জানা যায়, ডালিয়া থাকতেন কাম'রাঙ্গীরচরের কাম'রুল ইস'লাম কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে নানির বাসায়। এখানেই নাহিদের সঙ্গে প্রে'ম হয়। ছয় মাস আগে তারা বিয়ে করেন। সুখেই কাটছিল যুগলব'ন্দি দিন। কিন্তু ঈদের আগে নিউমা'র্কেট এলাকায় হওয়া সং'ঘর্ষে নাহিদের মৃ'ত্যু সব হিসাব এলোমেলো করে দিয়েছে ডালিয়ার জীবনের।