ক্লাসরুম সঙ্কটে জবির একাধিক বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিজ্ঞান অনুষদের চারটি বিভাগে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচতলায় করো'নাকালীন বন্ধের আগে ছয়টি ক্লাসরুম ছিল। সেখানে পরিসংখ্যান বিভাগের দুটি কক্ষ, গণিত বিভাগের একটি, রসায়ন বিভাগের একটি এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি সেমিনার কক্ষ ছিল।

পরবর্তীতে নিচতলার পুরোটা সংস্কার করে একপাশে আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার ও অন্যপাশে রেজিস্ট্রার দপ্তরের অফিস করা হয়। ফলে রফিক ভবনের নিচতলার ক্লাসরুমগুলো সংস্কার হওয়ায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে রয়েছে একটিমাত্র ক্লাসরুম। এমন অবস্থায় পাশের বিভাগগুলোর ক্লাসরুম ধার করে নেয়া হচ্ছে চলমান সেমিস্টার পরীক্ষা।

রসায়নের দুটি, গণিতের একটি আর মাঝেমধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের রুম নিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে পরিসংখ্যান বিভাগ। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে পাশের প্রা'ণিবিদ্যা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের অধীনে একটি কক্ষে। এছাড়া রসায়ন বিভাগের পরীক্ষা নেয়ার সময় পরিসংখ্যান বিভাগের কক্ষ ব্যবহার করা হয়।

এদিকে গণিত বিভাগের দুটি ক্লাসরুমে মাস্টার্সের দুই ব্যাচসহ মোট ছয়টি ব্যাচের পরীক্ষা নেয়া হয়। এ বিভাগে সবকটি ব্যাচের সমন্বয় করে পরীক্ষা নিলেও পরিসংখ্যান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা নিতে সমস্যা হচ্ছে। এমনকি রুমের অভাবে পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ব্যাচের অন্যান্য বন্ধুদের দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলেও আমাদের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা জানুয়ারিতে হবে বলে জানিয়েছে বিভাগ। এতে আম'রা সেশনজটে পড়তে পারি। অ'তিদ্রুত ক্লাসরুম বরাদ্দ দিয়ে আমাদের পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী তাদের বিভাগের ক্লাসরুম সঙ্কটের কথা জানান। বিভাগে পাঁচটি ব্যাচের বিপরীতে ক্লাসরুম রয়েছে একটি, আর ল্যাব রয়েছে দুটি।

পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা ক্লাসরুম হওয়ায় পাশের ডিপার্টমেন্টগুলোর রুম ধার করে পরীক্ষা নিচ্ছি। মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপনের সময় রফিক ভবনে থাকা আমাদের রুমগুলো নিয়ে নিয়েছে।

তাদের রুমগুলো নিলেও বিভাগকে জানানো হয়নি বলে অ'ভিযোগ করেন তিনি। তবে পুরো বিভাগ স্থা'নান্তর করা হবে বলে প্রশাসন আশ্বা'স দিয়েছে বলে জানান ওই বিভাগীয় চেয়ারম্যান।

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রফিক ভবনের নিচে আমাদের বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ দুটি যখন নেয়া হয়। তখন সাবেক উপাচার্য বলেছিলেন যে, আমাদের নতুন ভবনে (নিউ একাডেমিক ভবন) শিগগিরই ক্লাসরুম দেয়া হবে। এরপর আমাদের নতুন উপাচার্য এলে আম'রা তার কাছে বিষয়টি জানালে উনি একটি কমিটি করে দেন, যে আলোচনা করে কোথায় রুম দিলে ভালো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আম'রা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সার্ভে করেছি। কোন বিভাগের অধীনে কতটুকু জায়গা আছে। সার্ভের রিপোর্ট পাওয়ার পর বলা যাবে কার কতোটুকু প্রয়োজন বা কোনো বিভাগের কোনো চাহিদা আছে কি-না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাসরুম ও কক্ষ বরাদ্দ দেয়ার জন্য রয়েছে স্পেস বরাদ্দ কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহম'দ এবং সদস্য সচিব প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিরুল ইস'লাম।

কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিরুল ইস'লাম বলেন, স্পেস বরাদ্দ কমিটির পরবর্তী সভায় রফিক ভবনের নিচতলায় সে চারটি বিভাগের ক্লাসরুম ছিল, তাদের কক্ষ দেয়ার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইম'দাদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ডিপার্টমেন্ট ছাড়া সব ডিপার্টমেন্টেই জায়গা সঙ্কট আছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর একটি স্পেস বরাদ্দ কমিটি করে দিয়েছি। যেখানে ট্রেজারার আছেন, ডিন আছেন, চেয়ারম্যান আছেন, শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি আছেন, প্রকৌশল দপ্তরও আছে। তারা কাজ করছে। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরে আম'রা কাজ শুরু করবো।

তিনি আরও বলেন, কক্ষ সঙ্কটের জন্য পরীক্ষা পেছাবে না। যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা, কোনো ডিপার্টমেন্টের না, তাই সবাই সবার ক্লাসরুম শেয়ার করবে।

Back to top button