বাসায় কুরআন, হাদিসসহ ইস'লামি সাহিত্যের ছোট একটি পাঠাগার তৈরি করেছি : এ্যানী খান

২৩ বছর বিনোদন জগতে কাজ করেছি। কোনো দিন কোনো ক্লাবে যাইনি। কোনো বারে যাইনি। বার বা ক্লাবগুলোতে কী' হয় তা কে না জানে! আমি কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব- আমাকে স্প'র্শ করো না, তা হয় না।’ কথাগুলো বলছিলেন একসময়ের ছোট পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অ'ভিনয় শিল্পী এ্যানী খান।

সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ঢাকা বোট ক্লাবে ধ'র্ষণ ও হ'ত্যাচেষ্টার অ'ভিযোগ নিয়ে দেশব্যাপী হৈচৈ পড়ে যায়। ওই ঘটনায় মা'মলার পর অ'ভিযু'ক্ত দুই আ'সামিসহ পাঁচজনকে গ্রে'ফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পু'লিশ।

বোট ক্লাবে পরীকে ধ'র্ষণ ও হ'ত্যাচেষ্টার ঘটনায় অ'ভিযু'ক্ত ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী' অমিকে পাঁচ দিনের রি'মান্ডে নিয়ে সাভা'র মডেল থা'নায় জিজ্ঞাসাদ শেষে আ'দালত তাদেরকে জামিন দিয়েছে। যদিও গ্রে'ফতারের সময় তাদের কাছ থেকে মা'দক দ্রব্য উ'দ্ধারের ঘটনায় পু'লিশের আরেকটি মা'মলায় জামিন না হওয়ায় আপাতত তারা কারাগারেই আছেন।

এ দিকে পরীমণি যখন বোট ক্লাবে ধ'র্ষণ ও হ'ত্যাচেষ্টার অ'ভিযোগ এনে গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছেন, এরপরই গভীর রাতে গুলশান ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর ও হট্টগোল করার অ'ভিযোগে পরীর বি'রুদ্ধে থা'নায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। বিষয়টি এখনো বিনোদন পাড়া ও মিডিয়া পাড়ার আলোচনা-পর্যালোচনার অন্যতম ইস্যু।

বুধবার এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নয়া দিগন্তের সাথে মোবাইল ফোনে এক সাক্ষাৎকারে এক সময়ের অ'ভিনেত্রী ও টিভি উপস্থাপিকা এ্যানী খান বলেন, কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব, আমাকে স্প'র্শ করো না, তা হয় না।

এ্যানী খান দীর্ঘ ২৩ বছর ছোট পর্দায় কাজ করেছেন। গত বছর মা'র্চ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও করো'নাভাই'রাস মহামা'রী শুরুর দিকে মিডিয়াকে গুড বাই জানান তিনি। এরপর ধ'র্ম-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন সাবেক এই অ'ভিনয় শিল্পী।

এ্যানী খান বলেন, আমি আগে থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। ২০২০ সালের মা'র্চে অ'ভিনয় থেকে বিদায় নিয়েছি। তখন আমা'র হাতে কাজ ছিল না, ব্যাপারটি এমন নয়। আমি যখন অ'ভিনয় ছেড়েছি, তখন আমি ১০টি সিরিয়ালে কাজ করতাম। কিন্তু আমা'র জীবনে কোনো দিন বারে-ক্লাবে যাইনি।

অ'ভিনয় জগত থেকে নিজে গুটিয়ে নেয়ার পর নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস ও ইস'লামি বই-পুস্তক অধ্যয়নে মনোযোগী হন এ্যানী খান। এরই মধ্যে তিনি বাসায় কুরআন, হাদিসসহ ইস'লামি সাহিত্যের ছোট একটি পাঠাগার তৈরি করেছেন। তার ওই পাঠাগারে প্রায় দেড় শ’ বই রয়েছে।

এ দিকে গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন এ্যানী। ‘শূন্য পুঁজি’ দিয়ে তার এই ব্যবসা শুরু হলেও এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফেসবুক কেন্দ্রিক তার এই ব্যবসা। বিভিন্ন ডিজাইনের বোরকা, হিজাব ও থ্রি-পিস অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করেন তিনি। ধ'র্মীয় কাজের পাশাপাশি ব্যবসা কেন্দ্রিক কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটে তার।

এ্যানী বলেন, দুবাই ও চীন থেকে বেশিরভাগ পণ্য আনা হয়। কিছু কাজ আছে দেশের কারখানায় করানো হয়। তবে তিনি ব্যক্তিগত কোনো কারখানা করেননি। বাইরের কারখানায় কাজ করিয়ে পণ্য কিনে তিনি বিক্রি করেন। আর তিনি সম্পূর্ণ পেমেন্ট আগে নিয়েই পণ্য বিক্রি করেন বলেও জানান।

এসব কাজের ফাঁকে তিনি ইউটিউবে বিখ্যাত স্কলারদের ধ'র্মীয় আলোচনা শুনেন। নিজেও ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলেছেন। যেখানে হাদিসের আলোচনা করছেন তিনিই। এরই মধ্যে তার ইউটিউব চ্যানেলটি থেকে কিছু আয় হচ্ছে। এ্যানী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ইউটিউব চ্যানেল থেকে যা আয় হবে, পুরোটাই তিনি দ্বীনি বা ধ'র্মীয় কাজে ব্যয় করবেন।

এ সময়ের জনপ্রিয় ও আ'লোচিত বাংলা চলচ্চিত্রের দুই অ'ভিনেত্রী পরীমণি ও মাহিয়া মাহি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ্যানী খান বলেন, মাহির আবার কী' হয়েছে? তার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে পরীমণি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জানি না ওর সাথে কী' করা হয়েছে। তবে আমি কুমিরের খাঁচায় গিয়ে বলব, আমাকে স্প'র্শ করো না, তা হয় না।

আমি আমা'র অ'ভিনয় জীবনে কোনো দিন কোনো ক্লাবে কিংবা বারে যায়নি। কে না জানে ওখানে কী' হয়! ম'দ আল্লাহ হারাম করেছেন। ম'দ খেয়ে মাতলামি করবেন, গভীর রাতে বারে যাবেন, নাইট ক্লাবে যাবেন- তাহলে যা হওয়ার তাই তো হবে।

এ্যানী খান বলেন, পরীমণি বা মাহি আর আমা'র কাজের ক্ষেত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি সব সময় নাট'কে অ'ভিনয় করেছি। টিভিতে উপস্থাপনা করেছি। তারা চলচ্চিত্রে অ'ভিনয় করেন।

কিন্তু কেউ যখন ভালো কিছু দিয়ে মনুষকে আকৃষ্ট করতে পারে না তখন নেগেটিভ বিষয়গুলোতে ঝুকে পড়ে। আর জানেনই তো, আমাদের বাঙালিরা নেগেটিভ জিনিসগুলো বেশি পছন্দ করে। কিন্তু একজন অ'ভিনয় শিল্পীর উগ্র হওয়ার সুযোগ নেই। আপনি যতবেশি উগ্র হবেন, তত দ্রুত পতন হবে। … হয়েছেও তাই।

এ্যানী খানের দৃষ্টিতে, আগে যারা চিত্রনায়িকা ছিলেন, যেমন শাবানা, ববিতা, সূচরিত …তারা নিজেদেরকে আড়াল করে রাখতেন। তাদেরকে মানুষ দেখারও সুযোগ পেত না। তারা প্রত্যেকে একজন গুরু মানতেন। কিন্তু এখন কী' হচ্ছে?

অ'ভিনয় জগতে ফেরার ন্যূনতম আর কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে এ্যানী বলেন, পেছনের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি। অনেকে বলেন, ইউটিউবে আমা'র অ'ভিনিত আগের নাট'ক দেখা যায়।

এখানে আমা'র কোনো হাত নেই। আল্লাহ ক্ষমা করেছেন বা করবেন কি না তা তো এখন বুঝার সুযোগ নেই। মৃ'ত্যুর পরই তা জানা যাবে। তবে আল্লাহর ওপর আমি আস্থা রাখি। আল্লাহ ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই। আপনারাও দোয়া করবেন যেন বাকি জীবন ধ'র্মীয় ও ভালো কাজের মাধ্যমে অ'তিবাহিত করতে পারি।

Back to top button