বঙ্গবন্ধুর ৭ মা'র্চের বজ্রকণ্ঠে আমিও বিদ্যুতায়িত হয়েছিলাম: কোভিন্দ
বাংলাদেশে সফররত ভা'রতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দ বলেছেন, ‘একজন যুবক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নৈতিক সাহসে আমি অনুপ্রা'ণিত হয়েছিলাম। অন্যান্য লাখো মানুষের মতো আমিও তাঁর ৭ মা'র্চের বজ্রকণ্ঠে এবং সে সময়ে বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের আকাঙ্খা বহনকারী উপলব্ধিতে বিদ্যুতায়িত হয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমা'র প্রজন্মের লাখ লাখ ভা'রতীয়দের মতো আম'রা একটি অ'ত্যাচারী শাসনের বি'রুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় উল্লসিত এবং এদেশের জনগণের বিশ্বা'স ও সাহসে গভীরভাবে অনুপ্রা'ণিত হয়েছিলাম।’
তিনি আজ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী' এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সম্মানিত অ'তিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অ'তিথির ভাষণ দেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা ভা'রতের প্রেসিডেন্ট'কে ‘মুজিব চিরন্তন’ শ্রদ্ধাস্মা'রক প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযু'দ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী' উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরীও বক্তৃতা করেন।
কোভিন্দ বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযু'দ্ধের মতো এত মহাকাব্যিক ত্যাগের সাক্ষী মানব সভ্যতা খুব কমই হয়েছে। আপনাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রতিটি ভা'রতীয়, বিশেষ করে আমা'র প্রজন্মের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। গতকাল সাভা'রে লাখো শহীদের স্মৃ'তিসৌধ এবং বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন ছিল আমা'র জন্য গভীর আবেগময় অ'ভিজ্ঞতা। আমি তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মা'র্চের ভাষণের সারাংশ শুনে বিশেষভাবে অনুপ্রা'ণিত হয়েছি। এটি সর্বদা ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের চেতনাকে উদ্দীপিত করে। তাই ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্বতালিকায় ন্যায়সঙ্গতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভা'রতের প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনাদের সংগ্রাম ভা'রতে যে মাত্রায় সহানুভূতি এবং তৃণমূল-স্তরের সম'র্থন লাভ করেছে তার পরিমাণও ইতিহাসে বিরল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশের জনগণকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানের জন্য তাদের হৃদয়-দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আমাদের ভাই-বোনদের তাদের প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য করা আমাদের জন্য সম্মানের এবং পবিত্র দায়িত্ব ছিল।
রাম নাথ কোভিন্দ বরেন, ইতিহাস সর্বকালে আমাদের বন্ধুত্বের এই অনন্য ভিত্তির সাক্ষ্য দেবে যে গণযু'দ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেই যু'দ্ধের কয়েকজন সাক্ষী (ভা'রত ও বাংলাদেশ উভ'য়েরই) এখানে দর্শকদের মধ্যে রয়েছেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও রয়েছেন এবং তারা আমাদের বিশ্বা'স এবং বন্ধুত্বের শক্তির জীবন্ত সাক্ষ্য।
তিনি বলেন, মুক্তিযু'দ্ধের ৫০বছর পূর্তি উদযাপনে আমা'র সফর ও অংশগ্রহণের জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ একটি অনন্য সম্মান। এটি আমাদের বিশেষ বন্ধুত্বের একটি সত্যিকারের প্রতিফলনও বটে। আমি আনন্দিত যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মতোই, কোভিড মহামা'রী শুরু হওয়ার পর ভা'রতের বাইরে আমা'র প্রথম সফর আপনাদের দেশ বাংলাদেশে। মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমিও সম্মানিত।
কোভিন্দ বলেন, পঞ্চাশ বছরের কিছু আগে, একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রা'ণিত করেছিল। কিন্তু তখন সমালোচক, স'ন্দেহবাদী এবং নিন্দাকারীদের কাছে এটি একটি দূরবর্তী এবং অসম্ভব স্বপ্ন বলে মনে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট এবং বাস্তব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেন মুক্তির সম্ভাবনাকে বাতিল বলে মনে হচ্ছিল। একটি নিষ্ঠুর, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সুসজ্জিত শত্রু, যারা কোনো কিছুতেই থামবে না, তাদের বি'রুদ্ধে ল'ড়াই করতে বাংলাদেশের প্রতিকূলতা ছিল অনেক বেশি।
কোভিন্দ বলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণামূলক নেতৃত্ব, সুস্পষ্ট নৈতিক দৃঢ় প্রত্যয় এবং পূর্ব পা'কিস্তানের জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য তার অদম্য দৃঢ়তা ছিল সত্যিকার অর্থে পট পরিবর্তনকারী। ফলস্বরূপ, বিশ্ব একটি মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছাকে কোনো শক্তি দ্বারা দমন করা যায় না, তা যতই নৃ'শংস হোক না কেন।
ভা'রতের রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমন একটি বাংলাদেশ যা শুধু রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন নয়, বরং একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রও বটে। দুঃখের বিষয়, জীবদ্দশায় তাঁর দর্শন বাস্তবায়িত হতে পারেনি। স্বাধীনতা-বিরোধীরা যারা বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নি'র্মমভাবে হ'ত্যা করেছিল, তারা বুঝতে পারেনি যে বুলেট এবং সহিং'সতা এমন একটি ধারণাকে নির্বাপিত করতে পারে না যা মানুষের কল্পনাকে ধারণ করেছে।
ভা'রতের প্রেসিডন্টে বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশের পরিশ্রমী ও উদ্যোগী জনগণ বঙ্গবন্ধুর এই আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, আম'রা গত এক দশকে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছি, যা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়নের সুযোগও তৈরি করেছে। ভৌগোলিক সুবিধা ও আপনাদের দেশের চ'মৎকার অর্থনৈতিক সাফল্য সমগ্র উপ-অঞ্চল এবং বিশ্বকে উপকৃত করতে পারে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে যে, ঘনিষ্ঠ উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সংযোগ স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সোনার বাংলা গঠনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।-বাসস