ইম'রান ট্র্যাজেডি: তৃতীয় ধারা অসম্ভব উপমহাদেশে
ইম'রান খানের পতনের মধ্য দিয়ে পা'কিস্তানের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারার স্বপ্ন চুরমা'র হয়ে গেল। পা'কিস্তান মু'সলিম লীগ এবং পা'কিস্তান পিপলস পার্টির বিপরীতে ইম'রান খানের ‘পিটিআই’ রাজনীতি একটি তৃতীয় ধারার সৃষ্টি করেছিল এবং এই তৃতীয় ধারার মাধ্যমে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাসনে পাঠানোর একটা পরীক্ষাও ছিল। সেই পরীক্ষায় শুধু ইম'রান খান ফেল করেননি, যারা রাজনীতিতে তৃতীয় ধারার উত্থান ঘটানোর জন্য সবসময় চেষ্টা করেন তারাও হতাশ হয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। এই উপমহাদেশের রাজনীতিতে প্রধান রাজনৈতিক দলের দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায় এবং এই দুটি ধারার বাইরে তৃতীয় ধারা খুব একটা লক্ষ করা যায়না। পা'কিস্তানের রাজনীতিতে যেমন মু'সলিম লীগ-পিপলস পার্টি, ভা'রতের রাজনীতিতে যেমন কংগ্রেস-বিজেপি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপি। এই দুই ধারার বাইরে এই উপমহাদেশে সবসময় রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থানের চেষ্টা করা হয়েছে খুব মনোযোগ সহকারে। আর এই তৃতীয় ধারার উত্থানের চেষ্টা করেছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ এবং একটি এলিট শ্রেণীরা।
পা'কিস্তানে যেমন ইম'রান খানের উত্থান হয়েছে সাম'রিক এবং আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকতায়। মা'র্কিন যু'ক্তরাষ্ট্র মনে করেছিল, অক্সফোর্ড ফেরত একজন পশ্চিমা চালচলনে চলাফেরা করা মানুষের সেখানে তাদের স্বার্থই বেশি দেখবে। আর সেকারণেই নওয়াজের মু'সলিম লীগ এবং বেনজিরের পুত্রের হাতে অরক্ষিত পিপলস পার্টির বদলে ইম'রানকে তারা বেছে নিয়েছিল। সে'নাবাহিনী এবং মা'র্কিন যু'ক্তরাষ্ট্রই আসলে ইম'রানের পিটিআইকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় বসার পর ইম'রান খানকে নিয়ে মা'র্কিন যু'ক্তরাষ্ট্রের কেবল মোহভঙ্গ ঘটেনি, মোহভঙ্গ ঘটেছে খোদ সে'নাবাহিনীরও। এর ফলে পা'কিস্তানে তৃতীয় ধারার উত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে। পা'কিস্তানের এই ঘটনা উপমহাদেশের আর দুটি দেশের জন্য একটি বড় ধরনের শিক্ষা বটে। ভা'রতেও দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিস্ট পার্টি বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাতীয়ভাবে একটি তৃতীয় ধারার’ তৈরির চেষ্টা করছে। ভা'রতের মাত্র দুটি দলই সর্বভা'রতীয় রাজনীতি করে, বাকিগুলো আঞ্চলিক দল। তৃণমূল এখনো পশ্চিমবাংলা কেন্দ্রিক, আম আদমি পার্টি দিল্লি কেন্দ্রিক, যদিও পাঞ্জাবে তারা এবার বিজয় হয়েছে। কিন্তু এই বিজয় কখনোই তাদেরকে জাতীয় সংগঠনের ম'র্যাদা দেয় না। ভা'রতেও বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চলেছে একটা তৃতীয় শক্তির উত্থানের। কিন্তু ভা'রতের রাজনীতিতে বাইরের রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং সে'নাবাহিনীর হস্তক্ষেপ একেবারেই থাকে না। সেখানে রাজনীতিতে ৩য় ধারার আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি সুশীল গোষ্ঠীর। কিন্তু সেই আকাঙ্ক্ষা কখনোই খুব একটা আলোর মুখ দেখেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে নানা রকম আঞ্চলিক দলকে মিলে যে জোট করা হয়েছে সেই জোটেরও খুব একটা সাফল্য আসেনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারার চেষ্টা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বাইরে একটি রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টা এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেমন করেছে, এ দেশের সুশীল সমাজরাও করেছে। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবে কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো ফেরদৌস কোরেশীর কিংস পার্টি গঠিত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, তৃতীয় ধারা সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা থেকেই নূর এবং রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ গঠিত হয়েছে। এই রাজনৈতিক দলগুলোকে একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সবই পা'কিস্তানের পিটিআই আদলে নিজেদেরকে বিকশিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পা'কিস্তানের ঘটনা প্রমাণ করে দিলো যে, এই উপমহাদেশে এখনো তৃতীয় ধারার রাজনীতির জন্য প্রস্তুত নয়। এর ফলে বাংলাদেশে যারা তৃতীয় ধারার রাজনীতির বিকাশের স্বপ্ন দেখছিলেন তারা কিছুটা হলেও হোঁচট খাবেন।