৪০ হাজার মে'য়ের মধ্য থেকে একজনকে বিয়ে করে এদেশের রাজা

আফ্রিকা মহাদেশের স্থল বিশিষ্ট একটি দেশের নাম ইসোয়াতিনি। যার পূর্ব নাম ছিল ‘সোয়াজিল্যান্ড’। নামের মিল থাকায় বেশিরভাগ মানুষই সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে মিলিত দেশটিকে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও শুধুমাত্র এই কারণে দেশটির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই দেশের রাজা।

তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ৫০ তম স্বাধীনতা দিবসে দেশটির বর্তমান রাজা তৃতীয় এমসোয়াতি ঘোষণা দেন, সোয়াজিল্যান্ডের নতুন নাম হবে ইসোয়াতিনি। পুরো নাম কিংডম অব ইসোয়াতিনি। বাংলার যার অর্থ দ্বারায় সোয়াজির ভূমি। স্বাধীনতার ৫০ তম বছরে এসে উপনিবেশিক নাম বাদ দিয়ে স্বদেশী নাম ডাকতে পারায় বেশ আনন্দের ছিল সে দেশের জনগণের জন্য।

১৯৬৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে সোয়াজিল্যান্ড। মাত্র ৪টি জে'লা নিয়ে গঠিত আফ্রিকার ছোট দেশ ইসোয়াতিনির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। ম'রণঘাতী এইচআইভি আ'ক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে আফ্রিকার দেশটিতে। মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগই এইডস রোগে আ'ক্রান্ত।

ইসোয়াতিনি মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই খ্রিস্ট ধ'র্মাবলম্বী। তবে তারা অন্য ধ'র্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কৃষি নির্ভর অর্থনীতিই এ দেশটিতে শহরের সংখ্যা মাত্র দুটি। একটির নাম এমবাবেন, যা দেশটির প্রধান শহর এবং রাজধানী। অ'পরদিকে দ্বিতীয় শহরটি হলো মনজিনি ইসওয়াতিনি বৃহত্তম শহর। তবে আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হচ্ছে, আফ্রিকার দেশটির সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে একজন বাংলাদেশীর নাম। দেশটির সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইস'লাম।

ইসোয়াতিনির শাসনব্যবস্থার প্রশাসনিক প্রধান হচ্ছেন একজন রাজা। তিনি বলেন এবং করেন, সেগুলোই দেশের আইন। দেশ পরিচালনার সব দায়িত্ব রাজার এবং দেশের জনগণও রাজাকে একতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসোয়াতিনির রাজা প্রত্যেক বছরই একটি করে বিয়ে করে থাকেন। বর্তমানে রাজা তৃতীয় এমসোয়াতির ১৬ জন স্ত্রী' এবং ৩৫ জন সন্তান রয়েছে। এই রাজা যতদিন বেচে থাকবেন প্রতিবছরই একটি করে নতুন বিয়ে করবেন।

তার পিতা দ্বিতীয় এমসোয়াতি ৭০টির বেশি স্ত্রী' ছিল এবং ছে'লে-মে'য়ে ছিল ১৫০ জন। বিয়ে করার জন্য স্ত্রী' বাছাই করার নিয়মটা ও বেশ অদ্ভুত। প্রতিবছর আগস্ট মাসে তার একটি উৎসবের আয়োজন করে থাকে, যার নাম হয় ‘রিড নাচ’। আট দিনব্যাপী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৪০ হাজার মেয়ে। তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে নাচে অংশগ্রহণে পাশাপাশি মাতৃভাষায় গান গেয়ে থাকেন। রাজা সবার নাচ দেখে এবং গান শুনে ৪০ হাজার মে'য়ের মধ্যে তার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো একজনকে বেছে নেয় এবং তাকেই বিয়ে করে।

তাদের অন্যান্য উৎসবের মধ্যে রয়েছে ‘ব্রাই ডে’ এবং ‘ইনকানা’ উৎসব। তাদের ভাষা অনুযায়ী, ব্রাই মানে হলো পো'ড়া মাংস। নতুন বছরের প্রথম দিনে আম'রা যেমন নববর্ষ উদযাপন করে থাকে, তেমনি তারা বছরের প্রথম দিনটি ‘ব্রাই ডে’পালন করে থাকে। এই দিনে দেশের সব জনগণ তাদের সব কাজ ফেলে রেখে পো'ড়া মাংস খাওয়ার উৎসবে মেতে ওঠে।

অ'পরদিকে ইনকানা হলো মৌসুমী ফল ধ'রার পর তা খেয়ে দেখার উৎসব। দিন ব্যাপী হওয়া এই অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ার জন্য পর্যট'কদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় এই দেশটি।

Back to top button