কানাডায় ঢুকতে পারেননি ডা. মুরাদ, কোথায় আছেন তিনি?

দেশ ছেড়ে কানাডার উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন ডা. মুরাদ হাসান। কিন্তু দেশটিতে ঢুকতে পারেননি তিনি। টরন্টোর পিয়ারসনস বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। তিনি সবশেষ কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ডা. মুরাদ গত শুক্রবার দুপুর দেড়টায় টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে ইমিগ্রেশন কর্মক'র্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় তাকে জানানো হয়, তার সেদেশে ঢোকা নিয়ে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ও কানাডিয়ান নাগরিক আ'পত্তি তুলেছে। তারপর তাকে ফেরত পাঠানো হয়। পরে মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিমানে তাকে তুলে দেয়া হয়।

গতকাল রাত ৮টায় জানা গেছে ডা. মুরাদ হাসান বর্তমানে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তিন নম্বর টার্মিনালে অবস্থান করছেন। তবে দুবাই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুরাদকে সংযু'ক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশের কোনো অনুমতি দেয়নি। তার কাছে সংযু'ক্ত আরব আমিরাতের কোনো ভিসা নেই। একইসাথে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগের পক্ষ থেকে কানাডা থেকে ফেরত পাঠানোর কারণ জানতে চাওয়া হলে তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ডা. মুরাদ।

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, কানাডা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিমানে তুলে দেয়ার পর তিনি আরব আমিরাতের দুবাই নামেন। এমন একাধিক তথ্যের কোনোটিই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে প্রশ্ন উঠেছে ডা. মুরাদ এখন কোথায়? বাংলাদেশের হযরত শাহ'জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার একটি ছবি পাওয়া গেলেও এরপর থেকে তার আর কোনো ছবি মেলেনি কোথাও। একটি সূত্র বলছে, কানাডায় প্রবেশ করতে না পারলেও অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন মুরাদ হাসান।

ঢাকার কানাডীয় হাইকমিশনার গণমাধ্যমকে জানান, করো'নাকালীন কানাডা ভ্রমণের যথাযথ অনুমোদনের কাগজপত্র না থাকায় দেশটিতে প্রবেশাধিকার পাননি মুরাদ। তাকে প্রবেশাধিকার দেয়ার বিষয়ে একমাত্র এখতিয়ার দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সির। বাংলাদেশে নিযু'ক্ত কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোই প্রেফনটেইন একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে জানান, মুরাদ হাসানের বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তবে করো'নাকালীন ভ্রমণের বিষয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আছে, যা দেশটিতে ভ্যালিড (বৈধ) ভিসা থাকা সব ভ্রমণকারীর জন্য প্রযোজ্য। তবে কোনো ব্যক্তির ভিসা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশটির ইমিগ্রেশন ও বর্ডার এজেন্সি।

এর আগে মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দিতে আ'পত্তি জানিয়ে কানাডায় বসবাসকারী কিছু বাংলাদেশির একটি চিঠি বিমানবন্দরে তাকে আ'ট'কানোর পেছনে ভ‚মিকা রেখেছে বলেও জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছা'ত্রীদের নিয়ে অশালীন বক্তব্য, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাতনি জাই'মাকে নিয়ে কু'রুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনায় পড়েন ডা. মুরাদ। বিএনপির পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক অ'ভিনেত্রীর সঙ্গে অডিও কেলেঙ্কারি ফাঁ'স হয়, যেখানে ডা. মুরাদ তাকে হোটেল সোনারগাঁয়ে ডাকেন। যেতে না চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং ধ'র্ষণের হু'মকি দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মঙ্গলবার তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। এরপর জামালপুর জে'লা আওয়ামী লীগ ও সরিষাবাড়ী উপজে'লা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকেও বাদ দেয়া হয় তাকে। তুমুল সমালোচনা শুরুর পর গত সোমবার থেকে অনেকটা আত্মগো'পনে চলে যান মুরাদ হাসান। ওই দিন চট্টগ্রামের একটি পাঁচতারকা হোটেলে অবস্থান নেন তিনি। পরদিন ভোররাতে ঢাকায় ফিরে আসেন। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে চুপিসারে ঢাকার হ'জরত শাহ'জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন তিনি। রাত ১টা ২১ মিনিট নাগাদ সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ঢাকা থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৮৫৮৫ ফ্লাইটে করে দুবাই যান। সেখান থেকে তিনি কানাডার উদ্দেশে রওনা হন।

Back to top button