সেই বিজুকে জানা গেল অজানা তথ্য, যার কারণে ‘চিরকুমা'র’ ছিলেন জয়নাল হাজারী

ফেনীর রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে আ'লোচিত ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী চিরবিদায় নিয়েছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে উঠলেও আলোচনা ও বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়েনি। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃ'ত্যুই ছিলেন ‘চিরকুমা'র’।

এক সময়ের আলোচিত সংলাপ ছিল বিজুর বিচার চাই। খুবই আ'লোচিত সংলাপ। এই সংলাপের নিশ্চয়ই কারণ আছে। বিজুর গল্প অ'ভিনেতা স্বাধীন খসরুকে শুনিয়েছিলেন জয়নাল হাজারী। প্রয়াণের দিনে এসব কথাই স্ম'রণ করলেন অ'ভিনেতা।

তার লেখাটি হুবহু এখানে দেওয়া হলো- ‘মুক্তিযু'দ্ধে রণাঙ্গনে ছিলেন পাক হানাদার বাহিনীর সাক্ষাৎ যম। মুক্তিযু'দ্ধ-পরবর্তী তিনি ছিলেন রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীদের যম। বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারী ছিলেন একজন বহুল আ'লোচিত, সমালোচিত দেশপ্রে'মিক এক সাহসী র'হস্যময় পুরুষ। ইতিহাস, ধ'র্ম, সাহিত্য বা বিশ্বের যেকোনো বিল্পবী নেতাদের স'ম্পর্কে তিনি ছিলেন জ্ঞানগর্ভ।’

‘আমা'র সাথে পরিচয় তাঁর এক ভাগ্নে মগবাজারের মানিকের মাধ‍্যমে। আমিও মামা বলে ডাকতাম। একবার ফেনীতে তাঁর বাসার (রীতিমতো একটি প্রাসাদ) সামনে গিয়ে ফোন করে জানালাম যে আমি তার বাসার গেটে আছি। সাথে সাথে তিনি ব‍্যস্ত হয়ে পড়লেন, কেয়ারটেকার লিটনকে ফোন করে বললেন গেট খুলে গেস্টরুমে নিয়ে যেতে। বলে দিলেন বাসায় খাওয়ার কী' ব‍্যবস্থা, বাইরে কিংবা কোথায় খাব- এ সব কিছু। আমাকে মোটামুটি মৃদু ধমকের সুরে বললেন, তুমি জানো আমি এখন ঢাকাতে থাকি। মানিক ছিল আমা'র সাথে, জো'রেশোরেই ধমক দিলেন মানিককে, ওনাকে না জানিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য। বলে রাখলেন- প্রয়োজনে যেকোনো কিছু ঢাকা থেকেও পাঠাতে সমস্যা হবে না।’

‘শেষের দিকে উনি ঢাকার ধানমণ্ডি ১৩-তে থাকতেন। তাঁর সম্পাদনায় দৈনিক হাজারীকা নামে একটি দৈনিক পত্রিকা বের হতো। পত্রিকা অফিস ছিল তাঁর অফিস কাম বাসা। অনেকবার গিয়েছি অফিসে এমনিতে, আবার অনেকবার উনি ফোন করে বলতেন, স্বাধীন চলে আস। মানিককে ফোন করে বলতেন, মানিক্কা স্বাধীনকে নিয়ে আয়। আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর জ্ঞানগর্ভ গল্প শুনতাম। আড্ডা চলতো, সাথে খাওয়াদাওয়া।’

‘তাঁর লেখা কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমাকে বইগুলো দিয়ে বলেছিলেন, তোমাকে আমা'র বই শেলফে রাখার জন‍্য দিচ্ছি না, দিচ্ছি পড়ার জন‍্য। একটা বই ছিল ‘বিজুর বিচার চাই’। পরেরবার যখন আবার বসি, আমি জিজ্ঞেস করলাম- মামা বিজু কে? উনি কোনো উত্তর না দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন- এ গল্প নিয়ে সিনেমা বানানো যায় কি না?’

‘বললাম, মামা যাবে না কেন, অবশ্যই যাবে। আবারও জানতে চাইলাম, মামা বিজু কে? কিছুক্ষণের নীরবতা শেষে জানান, মহান মুক্তিযু'দ্ধে যাওয়ার আগে বিজুর সাথে কথা ছিল- যু'দ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে মহা ধুমধামে বিজুকে বিয়ে করবেন। যু'দ্ধ চলাকালীন জানতে পারেন, জো'র করে কোনো এক রাজাকারের সাথে বিজুর বিয়ে দেওয়া হয়েছে! প্রতিজ্ঞা করেন, যু'দ্ধ শেষে স্বাধীন দেশে ওই রাজাকারকে প্রথম খু'ন করবেন। দেশ স্বাধীন হয়, ফিরে আসেন। ফিরে এসে জানতে পারেন, জো'র করে বিজুকে বিয়ে দেওয়া হয়নি। বিজু তার নিজ ইচ্ছায় স্থানীয় এক কলেজের প্রিন্সিপালকে বিয়ে করেছে। জানার পর চুপ হয়ে যান। সারা জীবন চিরকুমা'র থেকে যান, তিনি আর বিয়ে করেননি। আর এই গল্প নিয়ে সিনেমা বানানোর আসল কারণ মানুষের কৌতূহল, তিনি কেন বিয়ে করেননি জানাতে।’

‘তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আফসোস করে বললেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায়, ততবারই তিনি সংসদ সদস্য নন, মানে নমিনেশন দেওয়া হয়নি তাঁকে। তিনবারই তিনি বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি আগের মতো সরব না, নীরব কেন। বললেন- আমা'র নেত্রী আমাকে নীরব থাকতে বলেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বা'সী, দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করেন।’

‘আজ তিনি সব মায়া ত‍্যাগ করে চলে গেছেন! আত্মা'র শান্তি প্রার্থনা মামা। ওপারে ভালো থাকুন। আপনার কর্ম, স্মৃ'তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান।’

Back to top button