নিউইয়র্ক সিটি হলে পবিত্র কোরআন শরীফ ছুঁয়ে শপথ নিলেন শাহানা হানিফ
শাহানা হানিফ নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মু'সলমান কাউন্সিলওম্যান হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বিশ্বের রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক সিটি হলে কাউন্সিলওমেন হিসাবে শপথ নিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ। স্থানীয় সময় ২৮ ডিসেম্বর সোমবার নিউইয়র্ক সিটি হলে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ নেন তিনি। গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ (ব্রুকলিন) থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহানা হানিফ।
শাহানা হানিফের শপথগ্রহণের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটি হলে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ইতিহাস রচিত হলো। ১৬২৫ সালে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার পর ৩৯৬ বছরের ইতিহাসে শাহানা হানিফই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, যিনি সরাসরি ভোটে কাউন্সিলওমেন হলেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তার কার্যকাল শুরু হবে।
শপথগ্রহণের সময় শাহানা হানিফের বাবা চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্ম'দ হানিফ, মা রেহানা হানিফ এবং তার ক্যাম্পেইন অফিসের কয়েকজন কর্মক'র্তা উপস্থিত ছিলেন। করো'নাভাই'রাস মহামা'রীর কারণে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল খুব সীমিত। প্রতি ঘণ্টায় একজন করে কাউন্সিলম্যান শপথ নিচ্ছেন। সে হিসাবে শাহানা হানিফের জন্য নির্ধারিত ছিল ২৮ ডিসেম্বর সোমবার বিকাল ৩টা। নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সিটি হলে প্রবেশ করেন শাহানা হানিফ। এরপর সিটি হলে স্পিকারের একজন প্রতিনিধি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথগ্রহণের সময় শাহানা হানিফ যে পবিত্র কোরআন ছুঁয়ে শপথ নেন তা তিনি বাসা থেকেই সঙ্গে করে নিয়ে যান। শপথের সময় তার মা রেহানা হানিফ পবিত্র কোরআন শরীফ হাতে রাখেন।
শপথ গ্রহণের পর সিটি হলের সংশ্লিষ্ট কর্মক'র্তারা সিটি কাউন্সিল অধিবেশনে শাহানা হানিফের জন্য নির্ধারিত আসন দেখিয়ে দেন। এর আগে প্রয়োজনীয় কাগজে স্বাক্ষর করেন তিনি। সিটি কাউন্সিলের সদস্য হিসাবে শাহানা হানিফ বছরে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ ডলার সম্মানীসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি পাবেন।
শপথ গ্রহণের পর সিটি হলে উপস্থিত একমাত্র বাংলাদেশি সাংবাদিক সোহেল মাহমুদকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় শাহানা হানিফ বলেন, ‘আমা'র খুব ভালো লাগছে। এটা আমা'র তিন বছরে একটা যাত্রা ছিল। এখন আমি অফিসিয়ালি কাউন্সিল মেম্বার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রস্তুত। আশাকরি সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন।’
কাজের অগ্রাধিকার কী' হবে জানতে চাইলে শাহানা হানিফ বলেন, এখন আমাদের কোভিড নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ গত দু’সপ্তাহ ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমা'র মূল লক্ষ থাকবে কোভিড পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন।’
মে'য়ের সাফল্যে দারুণ খুশী শাহানা হানিফের বাবা মোহাম্ম'দ হানিফ বলেন, ‘আমা'র মে'য়ে নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলওমেন হিসাবে শপথ নিয়েছেন। আমি খুব উচ্ছ্বসিত। আপনারা দোয়া করবেন আমা'র মে'য়ে যেন সিটির জন্য কাজ করতে পারে।’
উল্লেখ্য, শাহানা হানিফের জন্ম যু'ক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশে তাদের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। গত ২ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে ব্রুকলিনে বাংলাদেশিসহ স্প্যানিশ, জুইশ অধ্যুষিত কেনসিংটন, পার্ক স্লোপ এবং সেন্ট্রাল ব্রুকলিন নিয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট-৩৯ থেকে জয়ী হন শাহানা হানিফ। তিনি মোট ভোটের ৮৯ শতাংশ পেয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির উইনকোফ পেয়েছেন মাত্র ৮ শতাংশ ভোট।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের তৃতীয় প্রজন্মের অ'ভিবাসন চলমান। কিন্তু, এতদিন এখানে কোনো বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারেননি। গত ২ দশকের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও নিজেদের কোনো ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেননি বাংলাদেশিরা।
এ নির্বাচনে সিটি মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন এরিড এডামস। তিনি হবেন এই সিটির ইতিহাসে দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র।