যে ম'সজিদে তারাবি পড়ান বিশ্বজয়ী হাফেজ, মু'সল্লিদের ঢল

মূল শহর থেকে একটু দূরে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসহ নান্দনিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আবাসিক প্রকল্প ‘কল্পলোক’। যেখানে নির্মিত হয়েছে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন প্রথম মডেল ম'সজিদ ও ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ-এর প্রতিবেদক সৈয়দ বাইজিদ ইমনের প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।

এই ম'সজিদেই বিশ্বসেরা হাফেজ আবু রায়হান পড়াচ্ছেন তারাবির নামাজ। তাঁর সুমিষ্ট কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে নামে ধ'র্মপ্রা'ণ মু'সল্লিদের ঢল।

নগরের অনেক ম'সজিদে তারাবির নামাজ সাড়ে দশটার দিকে শেষ হলেও এ ম'সজিদে শেষ হয় সাড়ে ১১টার দিকে। বিশ্বজয়ী হাফেজের কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে দীর্ঘ সময় নিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করেন অনেক বয়োবৃদ্ধ।

অক্সিজেন নয়ারহাট এলাকা থেকে এ ম'সজিদে তারাবির নামাজ পড়তে আসেন ষাটোর্ধ্ব সিরাজুল ইস'লাম। কোম'রে ব্যথার কারণে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে ক'ষ্ট হয় তাঁর। তাই চেয়ারে বসেই দীর্ঘ সময়ের তারাবির নামাজ আদায় করেন তিনি।

সিরাজুল ইস'লাম বলেন, জীবনের শেষ বয়সে এসে উপনীত হয়েছি। পরের বছর তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবো কি-না জানি না। খবর পেয়েছি, এখানে ধীরস্থিরভাবে সুললিত কণ্ঠে বিশ্বজয়ী হাফেজ আবু রায়হান তারাবির নামাজ পড়াচ্ছেন। তাই ক'ষ্ট হলেও এখানে নামাজ পড়তে এসেছি। এ রকম মধুর কণ্ঠে তারাবির নামাজ পড়তে অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। পড়াতে দীর্ঘ সময় নিলেও তাঁর কণ্ঠে কুরআন শুনে সময় কোন দিকে চলে যায়, টের পাই না।
ম'সজিদটিতে পু্রুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য রাখা হয়েছে নামাজের সুন্দর ব্যবস্থা। যেখানেও অর্ধ শতাধিক মহিলার দূর-দূরান্ত থেকে নামাজ আদায় করতে আসেন।

কর্ণফুলী উপজে'লার ফকিরনীর হাট শাহমীরপুর গ্রাম থেকে আসা কাম'রুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি এখানে আবু রায়হান তারাবি পড়াচ্ছেন। তাই পড়তে আসছি। এতদূর থেকে এখানে তারাবি পড়তে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমা'র মোটরসাইকেল আছে। আমি আর আমা'র বন্ধু রহিম মিলে চলে আসি। কোনও সমস্যা হয় না। তাঁর কণ্ঠে তেলাওয়াত শুনতেই হৃদয় জুড়িয়ে যায়।

হাফেজ আবু রায়হান ২০১৮ সালে কাতারে আয়োজিত তিজান আন নূর ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এছাড়াও ক্বেরাত প্রতিযোগিতায়ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেন তিনি। তিনি নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারে মুফতি আবদুল কাইয়ুম প্রতিষ্ঠিত বল্লভদী আল ইসলাহ একাডেমির ছাত্র ছিলেন। এখন ঢাকার উত্তরায় মাদরাসাতুল ইহসানে পড়ছেন।

কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ঈর্ষণীয় সাফল্য ধরে রাখছে বাংলাদেশের কারি ও হাফেজরা। তিলাওয়াত ও হিফজ (মুখস্থ পড়া) শীর্ষক দুটি বিভাগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় হিফজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল বাংলাদেশের ক্ষুদে হাফেজরা। অন্য বিভাগ ‘তিলাওয়াত’ এ সুমধুর কণ্ঠের ছোঁয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের ক্বারিরা। তিজান আন নূর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ৫৪টি দেশের কয়েক শ প্রতিযোগীকে পেছনে পেলে এ ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেন তারা।

সিডিএ আবাসিক কল্পলোকের এ ম'সজিদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ইস'লামিক ফাউন্ডেশন। ধ'র্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মডেল ম'সজিদটি ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। মডেল ম'সজিদ ও ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণকাজ করেছে গণপূর্ত অধিদফতর।

জানা গেছে, এই মডেল ম'সজিদ কমপ্লেক্সে লাইব্রেরি, গবেষণা কক্ষ, ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শি'শু শিক্ষা কার্যক্রম এবং পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজ কক্ষ, মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি পর্যট'কদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। চারতলা বিশিষ্ট ম'সজিদে হ'জযাত্রী ও ই'মাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে মৃ'তদেহ গোসলের ব্যবস্থা। আধুনিক কারুকাজে নির্মিত এ ম'সজিদটি ধ'র্মীয় কার্যাদির পীঠস্থান। ম'সজিদটিতে একসঙ্গে ১ হাজার ২৫০ জন মু'সল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

বর্তমান সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জে'লা ও উপজে'লায় একটি করে উন্নত ম'সজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই আলোকে ২০১৫ সালে ধ'র্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ধ'র্ম মন্ত্রণালয় ‘প্রতিটি জে'লা ও উপজে'লায় ১টি করে ৫৬০টি ‘মডেল ম'সজিদ ও ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প হাতে নেয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইস'লামিক ফাউন্ডেশন। এরই অংশ হিসেবে বাকলিয়ার কল্পলোক আবাসিক প্রকল্পে এ মডেল ম'সজিদ ও ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এ মডেল ম'সজিদ ও ইস'লামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

কল্পলোক আবাসিকের মডেল ম'সজিদের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চট্টগ্রাম জে'লা প্রশাসক মোহাম্ম'দ মমিনুর রহমান বলেন, মডেল ম'সজিদটি নির্মাণ করার জন্য বড় জায়গার প্রয়োজন ছিল। এত বড় জায়গা চট্টগ্রাম শহরে আর কোথাও পায়নি, তাই কল্পলোক আবাসিক এলাকায় এ ম'সজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের বড় অর্জন। সিডিএ কল্পলোক আবাসিক প্রকল্পে এই প্রথম আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত মডেল ম'সজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আম'রা চেয়েছি এ ম'সজিদে বিশ্বজয়ী হাফেজ আবু রায়হান তারাবির নামাজ পড়াবেন। তাই আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনিও এখানে নামাজ পড়াতে সম্মতি দিয়েছেন। তাঁর সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তেলওয়াত শুনতে প্রতিদিন হাজারও মু'সল্লি ম'সজিদে তারাবির নামাজ আদায় করতে আসেন।

আবু রায়হান বলেন, আমা'র সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বনফুলের ডিরেক্টর আব্দুস শুক্কুর। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমা'র তেলাওয়াত শুনেছেন। আমাকে চট্টগ্রামের কল্পলোক আবাসিক এলাকার মডেল ম'সজিদে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বলিা হলে, আমি রাজি হই। এর আগেও চট্টগ্রাম আমা'র আসা হয়েছে। এখানকার পরিবেশ আমা'র ভালো লাগে। মানুষও অনেক আন্তরিক ও অ'তিথিপরায়ণ।

ম'সজিদ পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল শহর থেকে একটু দূরে নান্দনিক পরিবেশে এ ম'সজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু নামাজ পড়তে নয় প্রতিদিন অনেক মানুষ এ ম'সজিদের সৌন্দর্য দেখতে আসেন। এটি হলো ম'সজিদ কমপ্লেক্স। এখানে রয়েছে ইস'লামিক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইস'লামিক পাঠাগার। সেখান থেকে ইস'লামের নানা বিষয়ে শিক্ষা নিচ্ছেন শত শত শিক্ষার্থী।

Back to top button