নানকের প্লাস ৫, মাইনাস ৫
জাহাঙ্গীর কবির নানক, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের অন্যতম আ'লোচিত নেতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম আলোচনা আসছে সেই নাম গুলোর মধ্যে সবার আগে আছে জাহাঙ্গীর কবির নানকের নাম। একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভজন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে। আর এই সমস্ত কারণেই আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে বারবার তার নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘুরেফিরে আসছে। নানক এক সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ বলতে যা বুঝায় সেটির একটি উদাহ'রণ হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন?
আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেখা গেছে, অনেক সময়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিরা দলের সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন না। নানক কি তার ব্যতিক্রম হবেন? সাধারণ সম্পাদক করা না করাটা আওয়ামী লীগ সভাপতির এখতিয়ারধীন বিষয় কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মহলে আলোচনায় জাহাঙ্গীর কবির নানক কেন সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন, তার পক্ষে যেমন পাঁচটি যু'ক্তি আছে তেমনি কেন হবেন না তার পক্ষেও পাঁচটি যু'ক্তি রয়েছে। আম'রা এই প্লাস এবং মাইনাস যু'ক্তিগুলো খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছি। তার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পক্ষের যু'ক্তিগুলো হলো:
১. ছাত্রলীগ থেকে উঠে আসা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করে যে, জাহাঙ্গীর কবির নানক তৃণমূল থেকে উঠে আসা সত্যিকারের একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। কাজেই তারই সাধারণ সম্পাদক হওয়া উচিত।
২. কর্মী বান্ধব: জাহাঙ্গীর কবির নানক একজন কর্মী বান্ধব। তিনি সারাক্ষণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। কর্মীরা তার কাছে বিভিন্ন অভাব-অ'ভিযোগ নিয়ে কথা বলতে পারে। কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে যে ক’জন নেতা তার মধ্যে অন্যতম হলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।
৩. শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত এবং অনুগত: জাহাঙ্গীর কবির নানক শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন এবং অনুগত নেতা হিসেবে পরিচিত। এটি দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য একটি বড় যোগ্যতা। কারণ, সাধারণ সম্পাদককে সার্বক্ষণিক দলের সভাপতির সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করতে হয়।
৪. রাজনীতিতে ত্যাগ আছে: জাহাঙ্গীর কবির নানক রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জে'ল খেটেছেন, নি'র্যাতন ভোগ করেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তীতে যারা ত্যাগী রাজনীতিবিদ তার মধ্যে নানক অন্যতম।
৫. দলের আদর্শ বিচ্যুতি হয়নি: দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাহাঙ্গীর কবির নানক কখনো দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
এই পাঁচটি তার জন্য ইতিবাচক যে পাঁচটি কারণে তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। আবার তার মাইনাস পয়েন্টও আছে। কয়েকটি বিষয়ের কারণে তিনি সাধারণ সম্পাদক নাও হতে পারেন। তার মাইনাস বিষয়গুলো তার নেতিবাচক বা মাইনাস বিষয়গুলো হলো-
১. অ'তিরিক্ত জনপ্রিয়: অ'তিরিক্ত জনপ্রিয় যখন হয় তখন তার শত্রুও হয়। অ'তিরিক্ত জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগ শুধু নয়, যেকোনো রাজনৈতিক দলের একটা নেতিবাচক দিক থাকে। সেটিও জাহাঙ্গীর কবির নানকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
২. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আস্থার সংকট: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাহাঙ্গীর কবির নানকের আস্থার সংকট রয়েছে। যদিও ভা'রতের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে মা'র্কিন যু'ক্তরাষ্ট্রে তিনি কতটুকু গ্রহণযোগ্য এই নিয়ে কারো কারো সংশয় রয়েছে।
৩. গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন নন: কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যারা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে তাদের কাছে তিনি ততটা বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন নন। যদিও এই বিশ্বা'স অর্জনের জন্য জাহাঙ্গীর কবির নানক চেষ্টা করছেন বলেও অনেকে মনে করছেন, তারপরও কতটুকু পুরোপুরি আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন এটা নিয়ে অনেকের স'ন্দেহ আছে।
৪. হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের অ'পছন্দের: জাহাঙ্গীর কবির নানক যেহেতু তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন রাজনীতিবিদ, সেজন্য হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারীদের কাছে থেকে পছন্দের ব্যক্তি নন। আর হাইব্রিডরা যদি দলের শক্তিশালী হয়ে যায় তাহলে জাহাঙ্গীর কবির নানকের সাধারণ সম্পাদক হওয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
৫. দলের প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী: যারা আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে তারা অনেক শক্তিশালী। ফলে জাহাঙ্গীর কবির নানক জনপ্রিয় হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন না প্রবল প্রতিপক্ষদের কারণে হয়তো।
তবে শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়ে যে যু'দ্ধ সেই যু'দ্ধে কে জয়ী হবে, এটা বুঝতে গেলে আরো অ'পেক্ষা করতে হবে কাউন্সিল পর্যন্ত।