হঠাৎ আলোচনায় হাছান মাহমুদ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি, আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। বিরোধী দলের বি'রুদ্ধে যারা সবসময় সরব, তাদের মধ্যে নিঃস'ন্দেহে অন্যতম ড. হাছান মাহমুদ। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগের মধ্যে পরিচিত। আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম আলোচনা হচ্ছে তাদের মধ্যে হাছান মাহমুদের নাম আছে, তবে একটু পিছনের দিকে। কিন্তু সেই হাসান মাহমুদের নামই এখন অনেক বেশি করে আলোচনা হচ্ছে। নানা ঘটনা এবং বাস্তবতায় মনে করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে চ'মক হিসেবে আসতে পারেন ড. হাসান মাহমুদ। ড. হাসান মাহমুদের রাজনীতিতে উত্থান এবং বিকাশ অ'ত্যন্ত চ'মকপ্রদ। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন না।
শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্যও বিদেশে যান এবং লেখাপড়া করেন। সেখানে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে আসেন এবং তার ব্যক্তিগত কর্মক'র্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানেই তার রাজনৈতিক জীবনের পুনর্জন্ম ঘটে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় হাছান মাহমুদ মূলত রাজনীতিতে প্রদীপের আসেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতির ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গ্রে'ফতারে গ্রে'প্তার করা এবং তার বি'রুদ্ধে মিথ্যা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের নেতাদের যোগাযোগের সূত্র হয়ে ওঠেন। এসময় ড. হাছান মাহমুদ শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য ক্রিয়াশীল বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। বিশেষ করে আইনজীবী, চিকিৎসক এবং রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ের মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। ওয়ান-ইলেভেনের মধ্যেই শেখ হাসিনা মুক্ত হওয়ার পর হাছান মাহমুদও আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে মা'র্কিন যু'ক্তরাষ্ট্রে সফরসঙ্গী হন, আবার তিনি দেশে ফিরে এসেও আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। মূলত ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকার কারণেই তিনি রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা পান এবং শেখ হাসিনার আস্থাভাজন বিশ্বস্ত হিসেবে স্বীকৃতিও পান।
২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সাকা চৌধুরীর আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাকা চৌধুরীকে হারিয়ে চ'মক সৃষ্টি করেন। এরপর তিনি প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তারপর বন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সাফল্য দেখান। ২০১৪ সালে তিনি মন্ত্রী ছিলেন না কিন্তু সেই সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং এ সময় তিনি রাজনৈতিক বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতির জন্য আ'লোচিত থাকেন। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কঠোর সমালোচনা করার ক্ষেত্রে হাছান মাহমুদ ক্রমশ আ'লোচিত হতে থাকেন। বিরোধীদলও তাকে এজন্য ব্যাপক সমালোচনা করে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র হিসেবে তিনি পরিচিত হন। বিশেষ করে যখন সিনিয়র নেতারা নীরব তখন হাছান মাহমুদই যেন আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বরে পরিণত হন।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর হাছান মাহমুদের রাজনৈতিক জীবনে আরেকটি মাইলফলক যু'ক্ত হয়। তিনি তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, পরের বছর কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি আবার পদোন্নতি পান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের অন্যতম ভাগ্যবান নেতা হিসেবে তিনি স্বীকৃতি পান যিনি একাধারে দলের নেতা এবং সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। ডা. দীপু মনি এবং হাছান মাহমুদই দুইজন, যারা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং একইসাথে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে হাছান মাহমুদকে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। শুধু আওয়ামী লীগের ভেতরে নয়, বাইরে থেকেও বিভিন্ন মহল হাছান মাহমুদকে সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ভাবছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলে সেটা নিঃস'ন্দেহে চ'মক হবে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে তিনি এখন অনেকটাই এগিয়ে আছেন।