রাসুল সা: যেসব খাবার পছন্দ করতেন

প্রিয়নবী হ'জরত মুহাম্ম'দ (সা.) যেসব খাবার গ্রহণ করেছেন, তা ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আজকের বিজ্ঞানের গবেষণায়-এষণায় বিমূর্ত হচ্ছে, রাসুল (সা.)-এর খাবারগুলোর গুণাগুণ ও মানবদেহের জন্য সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা। নিম্নে সংক্ষেপে রাসুল (সা.)-এর কিছু খাবারের আলোচনা তুলে ধ'রা হলো।

পনির : আবদুল্লাহ ইবনে ওম'র (রা.) থেকে বর্ণিত, তাবুকের যু'দ্ধে রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু পনির নিয়ে আসা হয়। রাসুল (সা.) বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু খাবার খান। (আবু দাউদ : ৩৮১৯) মাখন : ইবনাই বিসর আল মু'সলিমাইন (রা.) থেকে বর্ণিত,

তারা উভ'য়ে বলেন, ‘একবার আমাদের ঘরে রাসুল (সা.) আসেন। আম'রা তার সামনে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করি। তিনি মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন। ’ (তিরমিজি : ১৮৪৩) মিঠাই ও মধু : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন ও মধু পছন্দ করতেন। ’

(বুখারি, ৫১১৫; মু'সলিম, ২৬৯৫) বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ। ’ (৫৩৫৯) ঘি মাখা রুটি : আবদুল্লাহ ইবনে ওম'র (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমের তৈরি ও ঘিয়ে ভাজা সাদা রুটি থাকত,

তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন…। (ইবনে মাজাহ : ৩৩৪০) দুধ : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মিরাজের রাতে বায়তুল মোকাদ্দসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.)

আমা'র সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দু’টি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন। ’ (বুখারি : ৩১৬৪, তিরমিজি, ২১৩) খেজুর : আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত,

আমি রাসুল (সা.)-কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা। ’ (আবু দাউদ : ৩৮৩০) অন্য হাদিসে আছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই। ’

এমনকি প্রিয় নবী (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরাম'র্শ দিয়েছেন। কিশমিশ : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন। ’ (মু'সলিম)

কালোজিরা : আবু হুরাই'রা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কালোজিরায় মৃ'ত্যু ব্যতীত সব রোগের ওষুধ রয়েছে।’ (বুখারি : ৫৬৮৭, মু'সলিম : ২২১৫) সারিদ : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অ'ত্যন্ত প্রিয় ছিল। ’

(আবু দাউদ : ৩৭৮৩) সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। আর হায়স হলো মাখন, ঘি ও খেজুর দিয়ে যৌথভাবে বানানো খাবার। সিরকা : জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) তার পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তারা বলেন,

আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী (সা.)-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। তারপর বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ হ'জরত জাবের (রা.) বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি। ’

(মু'সলিম : ২০৫১) তরমুজ ও শসা : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তা'জা) খেজুর খেতেন। (বুখারি : ৫১৩৪, তিরমিজি : ১৮৪৪) আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মু'সলিম : ৩৮০৬)

খরগোশের গোশত : আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, মা'ররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে ধরতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।

তবে আমি ধাওয়া করে সেটি ধরি এবং হ'জরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মা'রওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে পাঠান। রাসুল (সা.) সেগুলো আহার করেন। ’ তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল কি তা খেয়েছিলেন?

তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন। (বুখারি : ২৪৩৩) খাসির পায়া : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আম'রা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন। ’ (বুখারি : ৫১২২) মোরগ : জাহদাম (রা.) থেকে বর্ণিত,

একদিন আবু মু'সা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। হ'জরত আবু মু'সা জিজ্ঞেস করলেন, কী' হলো তোমা'র? লোকটি বলল, মোরগকে বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমা'র অ'পছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না। হ'জরত আবু মু'সা তাকে বললেন,

‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসুল (সা.)-কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমা'র শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে। (বুখারি : ৫১৯৮, ৪৬৬২; মু'সলিম : ১৬৪৯) লাউ : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রসুল (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করেন।

আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই দাওয়াতে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি।

(মু'সলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪) জলপাই : রাসুল (সা.) বলেন, তোম'রা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১০০৩, তিরমিজি : ১৮৫১) সামুদ্রিক মাছ : মহানবী (সা.) সাগরের মাছ পছন্দ করতেন।

এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর একটি দীর্ঘ হাদিস আছে। হাদিসটি বুখারি (৪৩৬১) ও মু'সলিম (১৯৩৫) শরীফে বর্ণিত হয়েছে।বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল (সা.) ম'রুভূমির এক প্রকার পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর-ডুমুর, আঙুর, ডালিম ইত্যাদিও পছন্দ করতেন।

Back to top button