পবিত্র রমজানের ঐতিহাসিক ৬ ঘটনা

বছর ঘুরে মু'সলিম উম্মা'র জন্য আবারো শুভ আগমন ঘটেছে পবিত্র রমজান মাসের। পবিত্র কুরআন নাজিলের পাশাপাশি এই মাসে আরো বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, প্রসিদ্ধ ছয়টি ঘটনা উল্লেখ করা হলো-

এক, ঐতিহাসিক বদর যু'দ্ধ: ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজ'রির ১৭ রমজানে বদর প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল মু'সলিম ও কাফিরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক এক যু'দ্ধ। যাতে মু'সলমানদের সর্বসাকুল্যে সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন। তাও তারা ছিলেন নিরস্ত্র।

গাছের ডালপালা ছাড়া তাদের কোনো হাতিয়ার ছিল না। ছিল না কোনো লৌহবর্ম বা শিরস্ত্রান। তবুও কুফরি শক্তিকে মু'সলমানরা পরাজিত করেছিল। মূলত ওই যু'দ্ধে তিন থেকে পাঁচ হাজার আসমানী ফেরেশতা প্রেরণ করে আল্লাহতায়ালা মু'সলমানদের সরাসরি সাহায্য করেছিলেন।

আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফির নি'হত হয় এই যু'দ্ধে। আরো ৭০ জন কাফির মু'সলমানদের হাতে ব'ন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মু'সলিম মুজাহিদ বীরবিক্রমে ল'ড়াই করে শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন।

দুই, ম'ক্কা বিজয়: অষ্টম হিজ'রির ২০ বা ২১ রমজান শুক্রবার নবীজি সা: ও সাহাবায়ে কেরাম ম'ক্কা বিজয় করেন। তখন কাবাঘর মুশরিকদের ৩৬০টি মূর্তি দিয়ে ভরা ছিল। মু'সলমানরা সেগুলো অ'পসারণ করে আল্লাহতায়ালার ঘরকে পবিত্র করেন।

তিন, নাখলা নামক জায়গার মূর্তি অ'পসারণ: রাসূল সা: অষ্টম হিজ'রির ২৫ রমজান হ'জরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা:-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন নাখলা নামক জায়গার একটি বৃহদাকার মূর্তি অ'পসারণের জন্য, কাফিররা এর পূজা করত, যার নাম ছিল উজ্জা।

হ'জরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ রা: নিজ হাতে ওই মূর্তি অ'পসারণ করেন। এরপর তিনি বলেন, আর কখনো এখানে উজ্জার উপাসনা হবে না। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৪/৩১৬)

চার, তায়েফে লাত নামক মূর্তি অ'পসারণ: নবম হিজ'রির রমজান মাসে তায়েফের সাকিফ গোত্র স্বেচ্ছায় ইস'লাম ধ'র্ম গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের উপাস্য ‘লাত’ নামক মূর্তি অ'পসারণ করে। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৫/৩১৬)

পাঁচ, ঐতিহাসিক তাবুক যু'দ্ধ: নবম হিজ'রির রজব মাসে তাবুক যু'দ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু তাবুক যু'দ্ধের কিছু ঘটনা সংঘটিত হয় নবম হিজ'রির রমজান মাসে। (আলফিকহুল ইস'লামী ওয়া আদিল্লাতুহু: ৩/১৬২৭)

এছাড়া হিজরতের দুই বছর আগে রমজান মাসে উম্মুল মো’মিনীন হ'জরত খাদিজা রা: এবং নবীজি সা: এর মেয়ে হ'জরত রুকাইয়া রা: ই'ন্তেকাল করেন।

হ'জরত হাসান ইবনে আলী রা: তৃতীয় হিজ'রির রমজান মাসে জন্মগ্রহণ করেন এবং চতুর্থ হিজ'রিতে নবীজি সা: হ'জরত যায়নাব বিনতে খুযাই'মা রা:-কে বিয়ে করেন।

১১ হিজ'রির রমজানে নবীজি সা: সবচেয়ে আদরের মে'য়ে, জান্নাতী নারীদের সরদারনী, হ'জরত ফাতিমা রা: এবং ৪০ হিজ'রিতে শেরে খোদা হযরত আলী রা: ই'ন্তেকাল করেন।

ছয়, লাইলাতুল কদর: রমজানের শেষ দশকে রয়েছে পবিত্রতম এক রাত। যা হাজার মাসের চেয়েও কল্যাণময় ও শ্রেষ্ঠ। যে রাতে মানবতার মুক্তির দিশারি, প্রভূত সফলতা ও জান্নাতের চাবিকাঠি সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব কোরআনকে প্রথম আসমান থেকে পৃথিবীর বুকে নাজিল করা হয়েছে।

মহিমান্বিত ও ম'র্যাদার এ রাতকে কুরআনুল কারিমে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়েছে। এজন্য আল্লাহ তাআলা ‘সূরাতুল কদর’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরাও নাজিল করেছেন। এ সূরায় পবিত্র এই রাতের ফজিলত ও বরকতের বর্ণনা ওঠে এসেছে।

এ সূরায় আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জান? শবে কদর হলো এক হাজার মাস অ'পেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনক'র্তার নির্দেশক্রমে। শান্তিই শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সূরা আল-কদর)

ম'র্যাদার এ রাত স'ম্পর্কে হাদিসে এসেছে- হ'জরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর তথা (ম'র্যাদার নির্ধারিত রাতে) ঈ'মানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি শরিফ)

এ রাতের জন্য কোনো দিন-রাতই সুনির্দিষ্ট না থাকলেও তা রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে (২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯) অনুসন্ধান করার কথা বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনে তোম'রা কদরের রাত তালা'শ কর।’ (বুখারি শরিফ)

Back to top button