আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ালী খানের সেই ম'সজিদ
৩০০ বছরের পুরোনো ওয়ালী খান ম'সজিদ। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের গোলজার মোড় থেকে মাত্র ১০০ গজ উত্তরে এটির অবস্থান।
জানা যায়, ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ম'সজিদটি নির্মাণ করেন চট্টগ্রামের মোগল ফৌজদার ওয়ালী বেগ খান। সেই থেকে এটি ওয়ালী খান ম'সজিদ বা অলি খাঁ ম'সজিদ নামে পরিচিত। আর ম'সজিদের নাম অনুসারে এলাকাটি অলি খাঁ মোড় নামে পরিচিত।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এ ম'সজিদের পূর্ব দিকে শানবাঁ'ধানো দিঘিটি কমলদহ দিঘি নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে সেটি ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। আর দিঘির পাড়ে ছিল ওয়ালী বেগ খানের কাচারি। সেই কাচারি থেকেই নবাবি কাজ চালাতেন তিনি।
সে সময়ে শুলকবহর পর্যন্ত বাণিজ্যের জাহাজগুলো যাতায়াত করত। তাই বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে এলাকাটিতে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ওয়ালী বেগ খান। যা পরে চকবাজার নাম ধারণ করে। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এলাকাটিতে আসা মানুষের জন্যই তিনি ম'সজিদটি নির্মাণ করেন বলে জানা গেছে।
মুঘল আমলের ঐতিহ্য বহনকারী এ ম'সজিদের আসল সৌন্দর্য বাইরে থেকে তেমনটা বোঝা যায় না। তবে ভেতরের অংশ অনেক চ'মকপ্রদ। মূল ম'সজিদের দেয়ালগুলো অনেক পুরু। দেয়ালের পুরত্ব প্রায় এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত। দেয়ালের গায়ে রয়েছে ছোট ছোট খোপ। যেগুলোতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা হতো বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে খোপগুলোতে পবিত্র কোরআন শরীফসহ বিভিন্ন জিনিস রাখা হয়।
ম'সজিদটির জন্য নির্ধারিত জায়গা প্রায় ১৮ শতক। তবে মূল ম'সজিদ নির্মাণ করা হয়েছে ছয় থেকে সাত শতক জায়গার ওপর। ম'সজিদে রয়েছে বিশাল আকারের ছয়টি গম্বুজ। যার মধ্যে চারটি বড় ও দুটি ছোট। মূলত গম্বুজগুলোই বৃদ্ধি করেছে ম'সজিদের সৌন্দর্য।
২০১০ সালে ম'সজিদটি ভেঙে পুনরায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে এটি মুঘল আমলের স্থাপনা ও মু'সলমানদের জন্য একটি ঐতিহাসিক ম'সজিদ হওয়ায় এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন অনেকে। একইসঙ্গে মূল ম'সজিদ না ভেঙে সামনের খালি অংশে নতুন ম'সজিদ ভবন নির্মাণের পরাম'র্শ দেন তারা।
শেষে ২০১১ সালে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি ম'সজিদটি না ভেঙে সংস্কার করতে স্থানীয় প্রশাসনকে পরাম'র্শ দেন। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ম'সজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্থানীয়রা তাকে ম'সজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করেন।
চট্টগ্রামের প্রাচীন মু'সলিম স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- আন্দরকিল্লা শাহী জামে ম'সজিদ, নবাব ইয়াসিন খান নির্মিত কদম মোবারক ম'সজিদ, নবাব ওয়ালী বেগ খান নির্মিত ওয়ালী খান ম'সজিদ, হামজা খাঁ ম'সজিদ, রাস্তি খাঁ ম'সজিদ, নসরত বাদশা ম'সজিদ। কালের বিবর্তনে এসব ম'সজিদের অনেকগুলো হারিয়ে গেলেও আন্দরকিল্লা শাহী জামে ম'সজিদ, কদম মোবারক ম'সজিদ ও ওয়ালী খান ম'সজিদ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।